শুল্ক কমানোর পর আমদানি বাড়লেও দাম কমছে না চালের। মোটা চালের দাম কিছুটা কমলেও সরু চাল আগের দরেই বিক্রি হচ্ছে। ফলে এখনো স্বস্তি ফেরেনি চালের বাজারে। শুল্ক কমানোর পর এ পর্যন্ত বেসরকারিভাবে ভারত থেকে ৮৪ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার ভিয়েতনাম থেকে সরকারিভাবে আমদানিকৃত ২০ হাজার টন চালের প্রথম চালান চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। যা এখন খালাস হচ্ছে। আগামী ১৮ জুলাই আরও ২২ হাজার টন, ২৪ জুলাই ২১ হাজার টন, ৩০ জুলাই ২৪ হাজার টন চাল আসবে। সবমিলিয়ে আগস্টের মধ্যে আরো এক লাখ ৪০ হাজার টন আসবে। কিন্তু চাল আমদানির উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব পড়ছে না দামের ক্ষেত্রে। পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কমলেও খুচরাবাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার আমদানি শুল্ক কমালেও একই সময়ে ভারত প্রতি টন চালে ৩৫ থেকে ৪০ ডলার রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। শুল্ক কমানোর আগে যে চাল প্রতি টন ৩৯০ থেকে ৪০০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হতো, সেই একই চাল এখন ভারত থেকে ৪২০ থেকে ৪৩০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হচ্ছে। ফলে আমদানি শুল্ক কমানোর সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা।
বিষয়টি স্বীকার করে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে চাল আমদানি পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ভারত তাদের চালের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। তারপরও চাল আসছে। তবে চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে অবৈধভাবে চাল মজুদকারীদের দায়ী করে মন্ত্রী বলেছেন, হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যা হওয়ার পর থেকেই অসাধু মিল মালিকরা চাল মজুদ শুরু করে। ফলে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধির একমাত্র কারণও অবৈধ মজুদ। যে সব মিল মালিক অবৈধভাবে চাল মজুদ করেছে, তাদের আমরা তিন বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছি। সরকার সঠিক সময়ে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, এর ইতিবাচক প্রভাবে বাজার নিম্নমুখী হচ্ছে।
তবে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাদামতলী ও বাবুবাজার চাল আড়ত ও কাওরানবাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাল আমদানির উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব পড়েনি খুচরাবাজারে। মোটা চাল কিছুটা কমলেও সরু চাল আগের দরেই বিক্রি হচ্ছে। ভালোমানের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা। এছাড়া মোটা মানের চাল ইরি/স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৬ টাকা কেজিতে। যা আগে বিক্রি হয়েছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়। এ হিসেবে মোটা চালের দাম কমেছে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সরকারি ও বেসরকারিভাবে যে চাল আমদানি হচ্ছে তা মোটামানের। ফলে মোটা চালের দামই কিছুটা কমেছে। সরু চালের দামে প্রভাব পড়েনি। তবে মোটা চালের দাম কমতে থাকলে এর প্রভাব সব ধরনের চালের দামের উপরেই পড়বে। তবে সময় লাগবে।
কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান ট্রেডিংয়ের এক বিক্রেতা জানান, ভারত থেকে যে চাল আসছে তার দাম বেশি। ফলে দেশের বাজারে দাম খুব বেশি কমবে না।
বাংলাদেশ অটো মেজর, রাইস ও হাসকিং মিলের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী ইত্তেফাককে বলেন, হাওরে অকাল বন্যায় ও ব্লাস্ট রোগে ২০ থেকে ২৫ লাখ টন চালের ঘাটতি হবে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলে ধানের ফলন ভালো হয়নি। প্রতি হেক্টর জমিতে ৬ থেকে ৮ মণ ধান কম হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। দাম বাড়ার ক্ষেত্রে মিল মালিকদের কোনো কারসাজি নেই বলে তিনি দাবি করেন।
রাজধানীর বাদামতলী ও বাবুবাজার চাল আড়ত মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক হাজী নিজামউদ্দিন গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম কেজিতে ১ টাকা থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে মোটা চালের দামটা বেশি কমেছে। শুল্ক কমানোর আগে পাইকারি বাজারে মোটা চালের কেজি ছিল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা। আর এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪১ টাকায়। মিনিকেট আগের তুলনায় কেজিতে ১ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৪ টাকায়। আর নাজিরশাইলের দাম কমেনি। আগের ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা দরেই বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, নাজিরশাইলের মৌসুম এখন শেষের দিকে। এই চালের দাম না কমার এটাও একটা কারণ।
তিনি আরো বলেন, সরকার চাল আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে এনেছে। তবে সরকার যদি শুল্ক পুরোপুরি উঠিয়ে নিত তাহলে চালের দাম কমার ক্ষেত্রে দ্রুত ইতিবাচক প্রভাব পড়ত। আমরা চাই চালের দামটা কমুক। স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসুক।