র্যাংকিংয়ে ১১ ধাপ এগিয়ে থেকেও কিরগিজস্তানের সঙ্গে ৩-১ গোলের হার। পার্থক্যটা পরিস্কার বুঝিয়ে দিয়ে গেছে কিরগিজ শিবির। বিষয়টি এমন, র্যাংকিং নয়, মাঠের খেলাই আসল। এবার সামনে তাজিকিস্তান। যারা বাংলাদেশের চেয়ে র্যাংকিংয়ে ২৭ ধাপ এগিয়ে। অন্যান্য দিক থেকেতো আরও। বলা চলে ঘরের মাঠে আরেকটি অগ্নিপরীক্ষার সামনে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মামুনুলদের হবে তাজিক পরীক্ষা।
রাশিয়া বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে বি গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে কাল মুখোমুখি হবে স্বাগতিক বাংলাদেশ ও সফরকারী তাজিকিস্তান। শুরুটা বাংলাদেশের হার দিয়ে। তাজিকিস্তানেরও তাই। ঘরের মাঠে জর্ডানের সঙ্গে ৩-১ গোলে পরাজয়। দ্বিতীয় ম্যাচে তাই জয়ের ক্ষুধা দুই শিবিরেই। ঘরের মাঠ বলে একটু বেশীই তেজোদীপ্ত মামুনুল শিবির।
তবে বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। বাংলাদেশ র্যাংকিংয়ে রয়েছে ১৬৬তম স্থানে। সেখানে তাজিকদের অবস্থান ১৩৯তম। র্যাংকিং বাদ দিলেও হেড টু হেড, শক্তি সামর্থ্য, ফিটনেস, সব দিক থেকেও পিছিয়ে বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে হার এড়াতে পারলেও খুশি হবে স্বাগতিক শিবির। তবে জয় এলে সোনায় সোহাগা। অধিনায়ক মামুনুলতো বললেন, ‘দেশের জন্য কিছু করতে চাই। শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করব, এটা বলব না, অবশ্যই দেয়ার চেষ্টা করব’।
সোমবার ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় দলের ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফকে একটু বেশিই সাবলিল মনে হলো। ছুঁড়ে আসার সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন বেশ আত্ববিশ্বাসী ঢঙ্গে। তার মতে, ‘আরেকটি সুযোগ আমাদের সামনে জয়ের জন্য। যদিও প্রতিপক্ষ বেশ শক্তিশালী। তাদের নিয়ে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করেছি। যদিও তা সহজ ছিল না। তবে আমি মনে করি কিরগিজস্তানের চেয়েও কঠিন টিম তাজিকিস্তান। শুধু তাই নয় শক্তিশালী জর্ডানের সঙ্গে তারা হারলেও ঐ ম্যাচে তাজিকরা বেশ ভালো খেলেছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা বেশ এগিয়ে। তারা বেশ লম্বাও।’
দম নিয়ে ক্রুইফ আর বলেন, ‘ফলে আগামীকাল আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। গত ম্যাচে বেশ দশর্ক মাঠে এসেছিল। আশা করি এই ম্যাচেও তাই হবে। দলে ইনজুরি সমস্যা থাকলেও আমি আশাবাদী ম্যাচ নিয়ে। দল দারুণ মুডে আছে। সবাই দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ফাইট করার জন্য’।
জয়ের প্রসঙ্গে ক্রুইফের মূল্যায়ন, ‘তাজিকদের বিরুদ্ধে অবশ্যই জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের।’
অধিনায়ক মামুনুল জ্বর ও পায়ের ব্যথায় আক্রান্ত। নাসির ইনজুরির কারণে দুই মাস মাঠের বাইরে। থাকছেন না জাহিদও। তারপরও দেশের জন্য খেলতে মাঠে নামবেন মামুনুল। তিনি বলেন, ‘অসুস্থ থাকলেও দেশের জন্য মাঠে নামব। কিছু একটা করতে হবে। হারলে বা ড্র করলে রাতে ঘুম হয় না। জয় পেলে ঘুমটা আরামদায়ক হয়। সব মিলিয়ে ম্যাচে সেরাটাই দিব।’
আগের ম্যাচের ভুল প্রসঙ্গে মামুনুলের দৃঢ় প্রত্যয়, ‘আগের ভুল করা যাবে না। কেউ করলে তার দায় তাকেই নিতে হবে।’ প্রতিপক্ষ সম্পর্কে মামুনুলের সমীহজাগানো প্রতিক্রিয়া, ‘ওদের ১৩-১৪ জন খেলোয়াড় সম্পর্কে ধারণা নিতে পেরেছি। কে কোথায় খেলে, কোন পজিশনে. ইত্যাদি। কিছু ভিডিও দেখেও জানার চেষ্টা করেছি। সব মিলিয়ে যা বুঝেছি, তারা বেশ স্ট্রং।’
সর্বশেষ লড়াইয়ে ২০১০ সালে তাজিকদের বিরুদ্ধে জয়ের রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। সে প্রসঙ্গে মামুনুল বলেন, ‘আসলে তারপর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। অনেককিছুই পরিবর্তন হয়েছে দলে। ফলে আগাম বলা মুশকিল’।
হেড টু হেডে অনেক এগিয়ে তাজিকিস্তান। দুই দল মোট ছয়বার মুখোমুখি হয়েছে। তাতে তাজিকদের জয় চারটি, বাংলাদেশের একটি। বাকি এক ম্যাচ ড্র। এর মধ্যে চারটি ম্যাচ ছিল বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে, বাকি দুই ম্যাচ ফ্রেন্ডলি।
তাজিকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ছিল ২০০৩ সালে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের প্লে অফ ম্যাচে। দুই লেগের ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরেছিল ২-০ গোলে। এরপর ২০০৬ সালে ঢাকায় ফ্রেন্ডলি ম্যাচে তাজিকিস্তানের সঙ্গে ৬-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। এর বছরখানেক পর বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দুই লেগের ম্যাচে মুখোমুখি হয় দুটি দেশ। প্রথম লেগে ঢাকায় তাজিকদের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে বাংলাদেশ। তবে ফিরতি লেগে তাজিকিস্তানের মাঠে বাংলাদেশ হেরে আসে ৫-০ গোলে।
বাংলাদেশের একমাত্র জয় ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারীতে। কলম্বোতে যেখানে বাংলাদেশ জিতেছিল ২-১ গোলে। শেষ মুখোমুখির স্মৃতি সুখকর ও অনুপ্রেরণাদায়ক। এবার ঢাকায় সপ্তম মোকাবেলায় তাজিকদের সঙ্গে কি পেরে উঠবে বাংলাদেশ? সেটাই এখন দেখার বিষয়।