একটা শঙ্কার কালো মেঘ ভর করে ছিল সেমিফাইনাল ম্যাচটি শুরুর আগ পর্যন্ত। এই প্যরাগুয়ের সঙ্গেই তো গ্রুপ পর্বে ড্র করতে হয়েছিল। এই প্যারাগুয়েই তো ব্রাজিলকে বিদায় করে দিয়েছিল। তা হলে না জানি কেমন প্রতিরোধ মেসিদের সামনে গড়ে তোলে তারা! কিন্তু না, দেখা গেলো প্রতিরোধ তো দুরে থাক, আর্জেন্টিনার সামনে দাঁড়াতেই পারেনি তারা। উল্টো গোলবন্যায় ভেসে ৬-১ ব্যবধানে হেরে গেলো তারা। আর ফাইনালে উঠে গেলো আর্জেন্টিনা।

এতবড় ব্যবধান, অথচ একটিও গোল আসেনি মেসির পা থেকে। আগের চার ম্যাচের মত আজ সেমিফাইনালেও গোলশূণ্য থাকলেন তিনি। সব মিলিয়ে ৫ ম্যাচে তার পা থেকে গোল এসেছে মাত্র ১টি। তাও পেনাল্টি থেকে। গোল করতে না পারলেও প্যারাগুয়ের বিপক্ষে অসাধারণ খেলেছেন তিনি। ৬ গোলের ৫টিরই যোগানদাতা ছিলেন এই বার্সা তারকা। মূলতঃ পুরো খেলাটার নিয়ন্ত্রণই ছিল তার পা থেকে।

মেসিছাড়া আর্জেন্টিার হয়ে অসাধারণ খেলেছেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। বলা যায় ডি মারিয়া নৈপুন্যের ম্যাচ এটি। গোলও করেছেন তিনি দুটি। এছাড়া বাকি গোলগুলো এসেছে সার্জিও আগুয়েরো, গঞ্জালো হিগুয়াইন, হ্যাভিয়ের পাস্তোরে এবং মার্কোস রোজোর পা থেকে। প্যারাগুয়ের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন লুকাস ব্যারিয়স।

প্রথমার্ধে মার্কোস রোজো এবং হ্যাভিয়ের পাস্তোরেকে দিয়ে এবং দ্বিতীয়ার্ধে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে দিয়ে একটি গোল করান তিনি। এছাড়া সার্জিও আগুয়েরো এবং গঞ্জালো হিগুয়াইনের গোলের যোগানদাতাও ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, মেসি তার সেই বিখ্যাত ট্রেডমার্ক টাইপের কিছু ড্রিবলিংও প্রদর্শণ করেন এই ম্যাচে। বিশেষ করে দলের চতুর্থ গোলটিতে দেখা যায় মেসি যাদু। তিনজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে, সেই বিখ্যাত দৌড়ে বল ঠেলে দেন ডি মারিয়ার দিকে। যেটা থেকে গোল পেতে কোন কষ্টই হয়নি ম্যানইউ তারকার।

পুরো ম্যাচেই বলতে গেলে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল আর্জেন্টিনার। প্রথম থেকেই প্যারাগুয়েকে ম্যাচ থেকে যেন ছিটকে দেয়। বল পজেশন এবং একের পর এক গোলের সুযোগ তৈরী করে ব্যস্ত করে তোলে প্যারাগুয়ের রক্ষণকে। তবে প্যারাগুইয়ানদের জন্য দুর্ভাগ্য। খেলার প্রথমার্ধেই ইনজুরির কারণে দু’জন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে হারায় তারা। ২৬ মিনিটে ডেরিল গঞ্জালেজ। যিনি ব্রাজিলকে হারানোর নায়ক ছিলেন। ব্রাজিলের বিপক্ষে দলকে সমতায় ফেরান তিনি। এরপর টাইব্রেকারেও শেষ শটটি নিয়ে গোল করেন গঞ্জালেজ। এছাড়া ৩০ মিনিটে মাঠ থেকে উঠে যেতে হয় দলের সেরা স্ট্রাইকার রক সান্তা ক্রুজকে।

১৫ মিনিটেই প্রথম প্যারাগুয়ের রক্ষণ ভাঙেন মার্কোস রোজো। এ সময় ফ্রি কিক নেন মেসি। বল গিয়ে পড়ে পেনাল্টি এরিয়ায়। প্যারাগুয়ে ডিফেন্ডাররা বলটি ক্লিয়ার করতে ব্যার্থ হয়। ফাঁকায় বল পেয়েই সেটি জালে জড়িয়ে দেন রোজো।

২৭ মিনিটে দলের দ্বিতীয় গোলেও হ্যাভিয়ের পাস্তোরেকে বল তৈরী করে দেন মেসি। ৪৩ মিনিটে প্যারাগুয়ে একটি সুযোগই পেয়েছিল। লুকাস ব্যরিওসের বাম পায়ের জোরালো শট গিয়ে জড়িয়ে যায় আর্জেন্টিনার জালে। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর দুই মিনিট পরই দলের হয়ে তৃতীয় এবং নিজের প্রথম গোল করেন ডি মারিয়া।

এর ৫ মিনিট পরই মেসির সেই রিমার্কেবল রান। তিনজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে তিনি প্রথমে বল দেন হ্যভিয়ের পাস্তোরেকে। তিনি শট নিলে বল ঠেকিয়ে দেন প্যারাগুয়ের গোলরক্ষক জাস্টো ভিলার। কিন্তু ফিরতি বলেই গোল করে বসেন ডি মারিয়া।
দলের পঞ্চম গোলেও অসাধারণ অবদান মেসির। ৮০ মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে একাই বল নিয়ে এগিয়ে আসেন মেসি। পাস দেন ডি মারিয়াকে। এরপর ডি বক্সে বল ভাসিয়ে দেন ডি মারিয়া। দৌড়ে এসে হেড করেন আগুয়েরো। ৮৩ মিনিটেও হিগুয়াইনের গোলটি এলো মেসির পাস থেকে।

৩৯ এবং ৬৮তম মিনিটে দুটি সুবর্ন সুযোগ পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন মেসি। বিশেষ করে, এ নিয়ে প্যারাগুয়ের সামনে কোপা আমেরিকায় টানা ২৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকলো আর্জেন্টিনা।
২২ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে শনিবারের উদ্বীপ্ত চিলির মুখোমুখি আর্জেন্টিনা। ১৯৯৩ সালের পর এখনও পর্যন্ত কোন শিরোপা জিততে পারেনি আর্জেন্টিনা। ১৯৯৩ সালে মেসির বয়স ছিল ৬ বছল। জাতীয় দলের হয়ে তো তার অর্জণ এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি শূন্য। সুতরাং, প্রথম কোন টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের সবচেয়ে সুবর্ন সুযোগের সামনে দাঁড়িয়ে মেসি।

২০০৪ এবং ২০০৭ কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও পরপর ব্রাজিলের কাছে হেরে শিরোপা জয় হয়নি তাদের। গত কোপার কোয়ার্টারে বিদায় নিতে হয়েছিল উরুগুয়ের কাছে হেরে গিয়ে। তবে, চিলিতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ চার কোপা আমেরিকার শিরোপাই জিতেছিল আর্জেন্টিনা। সর্বশেষ ১৯৯১ সালে। সুতরাং, চিলি যে, তাদের জন্য সৌভাগ্যের সেটাও জোর দিয়ে বলা যায়।

অপরদিকে স্বাগতিক চিলিও কম যায় না। বলা হচ্ছে চিলিয়ানরা সবচেয়ে সোনালি প্রজন্মটা পেয়েছে এই কোপা আমেরিকায় এসে। দুর্দান্ত খেলছে দলটি। যেমন গতি, তেমন স্কিল আর প্রতিভাবান ফুটবলারের সমন্বয়। তারওপর তারা খেলবে নিজ দেশে নিজেদের সমর্থকদের সামনে। কোপার ইতিহাসে প্রথম শিরোপার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দলটি। সুতরাং, আর্জেন্টিনার জন্য যে কাজটি মোটেও সহজ হবে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।