জার্মানির জাতীয় নির্বাচন
জার্মানির জাতীয় নির্বাচন

জার্মানির জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান দুই দলের প্রার্থীর মধ্যে টিভি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বিতর্কের পর কয়েকটি জনমত জরিপে ক্ষমতাসীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী অ্যাঞ্জেলা মার্কেল নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্ব^ী ও বর্তমান জোট সরকারের অংশীদার সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির মার্টিন শুলজের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর জার্মানির সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে দুই শীর্ষ প্রার্থীর একমাত্র ‘টেলিভিশন বিতর্ক’ প্রত্যক্ষ করেন দেশটির সাধারণ জনগণ। মার্কেল যে গত ১২ বছর ধরে জার্মানির সরকার পরিচালনা করে আসছেন বিতর্কে তিনি তার ছাপ রেখেছেন। জার্মান সংবাদ মাধ্যমগুলোর মতে, টিভি বিতর্কের ক্ষেত্রে এটাই তার সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স। খবর বিবিসির।
রোববারের টেলিভিশন বিতর্ক অনুষ্ঠানে মার্কেল তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করেছেন। প্রতিপক্ষের হামলার মুখেও তাকে তেমন বিচলিত হতে দেখা যায়নি। ২০১৫ সালে শরণার্থীদের ঢল সামলাতে তিনি নিজের সিদ্ধান্তে এখনও অটল রয়েছেন। বিদেশিদের অভিবাসনের প্রশ্নেও তিনি নিজের ঘোষিত পথে এগোতে চান। ডিজেলগেট কেলেঙ্কারি সামলাতে তিনি কোনো চমকের বদলে এক সার্বিক সমাধান সূত্রের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। মোটকথা চতুর্থবার চ্যান্সেলর হয়ে মার্কেল ধারাবাহিকতা বজায় রাখার অঙ্গীকার করেছেন। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী মার্টিন শুলজ পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন।
তবে চাপের মুখে পড়ে তিনি এমন কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন, যা এতকাল অস্পষ্ট ছিল। যেমন তিনি বলেন, জার্মানিতে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের বয়স কোনো অবস্থায় বাড়িয়ে ৭০ করা হবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের যোগদান সংক্রান্ত আলোচনা বাতিল করার প্রস্তাবেও তিনি সায় দেন।
মার্কেল বলেন, তুরস্ক কখনোই ইইউর সদস্য হাত পারবে না, যদিও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান বহুদিন ধরেই বলে আসছেন যে, তার দেশ আর ইইউর সদস্যপদ পেতে আগ্রহী নয়।
প্রার্থী হিসেবে মার্কেল ও শুলজের মধ্যে মতের মিলের অভাব নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নে জার্মানির ভূমিকা থেকে শুরু করে অভিবাসন প্রসঙ্গে তাদের অবস্থান প্রায় এক। টেলিভিশন বিতর্ককে তাই অনেকে ‘ডুয়েল’ না বলে ‘ডুয়েট’ আখ্যা দিচ্ছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আদলে দুই প্রার্থীর মধ্যে টিভি বিতর্কের রীতি জার্মানিতে চালু হয় ২০০২ সাল থেকে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের তুলনায় জার্মান চ্যান্সেলরের ক্ষমতা অনেক সীমিত। সংসদীয় ব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যে জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতা সামলে তাকে কাজ করতে হয়। তা সত্ত্বেও এই টিভি বিতর্ক জার্মানিতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রোববার জার্মান চ্যান্সেলর আঞ্জেলা মার্কেল ও তার প্রতিপক্ষ মার্টিন শুলজের বাকযুদ্ধ দেখেছেন সম্ভবত প্রায় ২ কোটি মানুষ। অনুষ্ঠানের পর বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী মার্কেলই এই বাকযুদ্ধে জয়ী হয়েছেন।
তবে নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগের এই একটি টেলিভিশন বিতর্ক ভোটারদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সব মহলেই সন্দেহ রয়েছে। বিশেষ করে যে সব ভোটার এখনও মনোস্থির করে উঠতে পারেননি, তাদের সিদ্ধান্তের ওপর ২৪ সেপ্টেম্বরের সংসদ নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করবে। স্বতঃস্ফূর্ত বাকযুদ্ধ নয়, রীতিমতো নিয়মের কাঠামোয় মুড়ে দেয়া হয়েছিল এবারের টিভি বিতর্ক। বিতর্কে মোট চারটি বিষয় স্থির করে দেয়া হয়। সেই গণ্ডির মধ্যেই মার্কেল ও শুলজকে আবদ্ধ থাকতে হয়েছে। অনুষ্ঠানের পর শুলজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ হয়তো দেয়া হয়নি। তবে তিনি দ্বিতীয় বিতর্কের দাবি জানালেও মার্কেল তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। একমাত্র এই বিতর্ককে ঘিরে বিতর্কও কম ছিল না। জোট সরকার গঠনে যে সব দলের ভূমিকা অনস্বীকার্য, সেই সব দলের নেতাদের বিতর্কে শামিল করা হয়নি। তাদের জন্য সোমবার আলাদা টেলিভিশন বিতর্কের আয়োজন করা হচ্ছে। তাছাড়া বিষয় বাছাই নিয়েও সমালোচনা শোনা যাচ্ছে।