ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্যের নানা গল্প আমরা কম-বেশি সবাই শুনেছি। সেই কোনোকালে বিষাক্ত কোবরার বিষে প্রাণ হারিয়ে ছিলেন এই রূপবতী রানী।
কিন্তু ২১ শতকেও যেন জীবন্ত ক্লিওপেট্রার সেই গল্পগাঁথা। এখনও সবার একই প্রশ্ন ক্লিওপেট্রা এত সুন্দরী হয়ে উঠেছিলেন কীভাবে? তার অপরূপ সৌন্দর্যের চাবিকাঠিই বা কী ছিল?
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেছেন ত্বক ও রূপ বিশেষজ্ঞরা। জেনে নেয়া যাক, কীভাবে সৌন্দর্যের চূড়ায় পৌঁছেছিলেন এই মিশরীয় সম্রাজ্ঞী;
গোসল: ক্লিওপেট্রার রূপচর্চার প্রথম ধাপ হল তিনি দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে গোসল করতেন। শুধু তাই নয়, মাঝে মাঝে এই মিশ্রণে যোগ করা হত বাদাম তেলও। তাই তো সময়ের সরণি বেয়ে বয়স বাড়লেও তার ছাপ পড়েনি রানীর ত্বকে।
এমনটা হয়তো আপনাদের পক্ষে করা সম্ভব হবে না। তবে একটা কাজ করতে পারেন যেমন: ৩ কাপ দুধে হাফ কাপ মধু এবং ৫ চামুচ বাদাম তেল মিশিয়ে তা দিয়ে গোসল করুন। এমনটা কয়েকদিন করলেই দেখবেন ত্বক সুন্দর এবং নরম হয়ে উঠবে।
ক্লিওপেট্রার বডি স্কার্ব: ত্বকের উপরি অংশে জমে থাকা মৃত কোষের স্থর এবং ত্বকের গায়ে লেগে থাকা ময়লা ধুয়ে ফেলতে আমরা সবাই বডি স্কার্ব ব্যবহার করে থাকি। মিশরের রানীর সময়ও বডি স্কার্বের ব্যবহার ছিল চোখে পরার মতো।
সে সময় ক্লিওপেট্রা বিশেষ এক ধরনের প্রাকৃতিক স্কার্ব দিয়ে তার শরীর পরিষ্কার করতেন। তাতে দুধ এবং মধুর কার্যকারিতা আরও বেড়ে যেত। সেই প্রাকৃতিক বডি স্কার্ব চাইলে আপনি বানাতে পারেন।
এজন্য প্রয়োজন পরবে ২ চামুচ সামদ্রিক লবণ এবং ৩ চামুচ থকথকে ক্রিমের। এই দুটি উপাদান মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি দিয়ে গোলাকার ছন্দে ভাল করে সারা শরীরে ঘষতে থাকুন। কম করে ৫ মিনিট ঘষার পর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
ফেস ক্রিম: ক্লিওপেট্রার অপরূপ সৌন্দর্যের আরেক চাবিকাঠি ছিল তার ফেস ক্রিম। এটি বানাতে সে সময় ব্যবহার করা হত ২ চামুচ অ্যালোভেরা জেল, ৪ ফোটা গোলাপ পানি বা গোলাপ তেল, ১ চামুচ বাদাম তেল এবং ২ চামুচ ত্বকের জন্য ব্যবহৃত মোম।
প্রথমে মোমটা নিয়ে হালকা আঁচে গলিয়ে নিন। তারপর তাতে একে একে বাদাম তেল, অ্যালোভেরা জেল এবং গোলাপ তেল মেশান। মিশ্রণটি তারপর পাত্রে ঢেলে ফ্রিজে রেখে দিন।
প্রতিদিন এই প্রাকৃতিক ক্রিমটি মাখলে ক্লিওপেট্রার মতো সুন্দর হয়ে উঠতে একেবারেই সময় লাগবে না। এছাড়া ইচ্ছে হলে এ মিশ্রণে ভিটামিন-ই ক্যাপসুলও মেশাতে পারেন। এতেও বেশ উপকার পাবেন।
ফেসিয়াল মাস্ক: এক আজব ধরনের ফেসিয়াল মাস্ক ব্যবহার করতেন ক্লিওপেট্রা। অনেকে বলে তার সৌন্দর্যের পেছনে এই ফেসিয়াল মাস্কের ভূমিকাই ছিল সিংহভাগ। তাই আপনারাও সুন্দরী হয়ে উঠতে এই প্রাকৃতিক ফেসিয়াল মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন।
এটি তৈরিতে প্রয়োজন পড়বে দুই চা চামুচ সাদা কাঁদামাটি, দুই চা চামুচ দুধ, ১ চা চামুচ মধু এবং এ চা চামুচ অলিভ অয়েল বা বাদাম তেলে।
উপরের উপকরণগুলো ভালো করে মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন। তারপর সেই পেস্টটি ভাল করে মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে কয়েকবার এই ফেসিয়াল মাস্কটি দিয়ে রূপচর্চা করুন।
অ্যান্টিসেপটিক মাস্ক: ত্বককে নানাবিধ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে সে যুগেও অ্যান্টিসেপটির মাস্কের ব্যবহার হত এবং সেটি করতেন স্বয়ং রূপের রানী ক্লিওপেট্রা।
এই ফেস মাস্কটি বানাতে ব্যবহার করা হয় ১টা ডিমের কুসুম, ১ চা চামুচ বাদাম তেল এবং ১ চা চামুচ মধু। এই সবক’টি উপাদান ভালো করে মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট ধরে ভালো করে মুখে ঘষতে হবে। সময় হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলবেন।
ত্বককে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত করে তুলতে এই প্রাকৃতিক মিশ্রণটির আজ পর্যন্ত কোনো বিকল্প পাওয়া যায়নি বলে মনে করেন ত্বক বিশেষজ্ঞরা।
প্রাকৃতিক শ্যাম্পু: নিজের চুলকে আকষর্ণীয় করতে ক্লিওপেট্রা ব্যবহার করতেন প্রাকৃতিক শ্যাম্পু। এ শ্যাম্পুটি বানানো হত তিনটি ডিমের কুসুমের সঙ্গে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে।
দীর্ঘ সময় চুলের উজ্জ্বলতা এবং সৌন্দর্য ধরে রাখতে এই প্রাকৃতিক মিশ্রণটি দারুণ কাজে আসতো।
তাই আপনিও যদি ক্লিওপেট্রার মতো সুন্দর চুলের অধিকারী হয়ে উঠতে চান, তাহলে আজ থেকেই ব্যবহার করুণ এই প্রাকৃতিক শ্যাম্পুটি।