কেউ যদি আপনাদের কাছে ঘুষ চায় তাহলে আপনারা আমাদের কাছে আসুন। ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে কথা বললে আপনার কাজের কোনো ক্ষতি হবে না, আপনার কাজ ওই দিনই করা হবে এবং ঘুষখোরকেও ধরা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিয়ময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

ফাঁদ পেতে হাতেনাতে ঘুষ ধরার কথা জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ঘুষ বন্ধ করতে আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। আপনারা মনে করেন যদি ঘুষখোরকে হাতেনাতে ধরিয়ে দেই, তাহলে আমার কাজ কিংবা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে! না, কোনভাবেই এটা হবে না। আমি আপনাদের বলছি, আপনার কাজ উল্টো চিরদিনের জন্য স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে চাই, আপনারা স্বচ্ছ মনে ব্যবসা করবেন, কাউকে ঘুষ দিবেন না।

ব্যবসায়ীক কাজে নিরুপায় হয়েই ঘুষ দিতে হয় মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীদের এমন বক্তব্যের জবাবে চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, গত বছর টিআই এক প্রেজেন্টেশনে বলেছিল যে, মানুষ বাধ্য হয়ে ঘুষ দেয়। আমি ওই সময় একটা কথা বলেছিলাম ঘুষ দাতা এবং গ্রহীতা উভয়কে ধরা হবে। তখন টিআই বলেছিল মানুষ বাধ্য হয়ে ঘুষ দিলে তাকে ধরবেন কেন? তবে হ্যাঁ, বাধ্য হয়ে ঘুষ দিলে আমরা তাদের ধরি না।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ব্যবসার জন্য সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয় হলো মুক্তবাজার ব্যবস্থাপনা। এই বাজার ব্যবস্থাপনায় যে কোনো ধরনের অনৈতিক হসস্তক্ষেপ বা দুর্নীতি ব্যবসার পরিবেশ বিনষ্ট করে এবং দেশীয় বিনিয়োগের পথকে বাধাগ্রস্ত করে। দেশীয় বিনিয়োগ না হলে, বৈদেশিক বিনিয়োগও আসবে না।

ব্যবসায়ীদের কাউকে অযথা দুদকের কোন কর্মকর্তা হয়রানি করলেও ছাড় দেয়া হবে না জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনো কোনো কর্মকর্তা ব্যবসায়ীদের হয়রানি করেন এমন বক্তব্য কখনও কখনও শোনা যায়। আমি এ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, এমন কোনো ঘটনা আপনাদের নজরে এলে তা কমিশনকে জানাবেন। আমাদের  দ্বার ব্যবসায়ীদের জন্য সব সময় উন্মুক্ত। তবে ব্যবসার একটি নৈতিক মানদণ্ড থাকা উচিৎ। ভ্যাট ফাঁকি, ট্যাক্স ফাঁকি, ওভার ইনভয়েসিং অথবা আন্ডার-ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে অনৈতিক উপায়ে অর্থ উপার্জন দেশের সংবিধানও সমর্থন করেনা।  আর যখন অনুপার্জিত আয় কেউ ভোগ করেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ আসে তখন কমিশনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে যায়।

ব্যাংক ঋণের বিষয়ে দুদক হসত্মড়্গেপ করে না জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন,‘ ব্যাংক ঋণ বিতরণ কিংবা আদায় প্রক্রিয়ায় দুদক হস্তক্ষেপ করে না, কখনও করবেও না। তবে ব্যাংক ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কেউ যদি জাল কাগজপত্র বা দলিলাদি ব্যবহার করেন তাহলে বিষয়টি দুদকের এখতিয়ারে এসে যায়। সবাইকে মনে রাখতে হবে সরকারি-বেসরকারি সকল ব্যাংকের অর্থই পাবলিক মানি। এটার যে কোনো প্রকার অপচয় বা ক্ষতিসাধনই দুর্নীতি।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সরকারি কার্যক্রমে  পদ্ধতিগত উন্নয়নের কথা বলছি। পদ্ধতিগত উন্নয়ন ছাড়া সরকারি পরিষেবার মান উন্নয়ন সম্ভব নয় জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দ্রুত সেবা নেওয়ার নামে ঘুষ বা স্পিড মানি সহ্য করা হবে না। সরকারি সকল সেবা নির্ধারিত টইিম-ফ্রেমেই দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ে সেবা দিতে না পারলে দায়ী কর্মকর্তাকেই এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এমন ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন  সরকারী কর্মকর্তারা যদি সচিবালয় নির্দেশিকা মানেন তাহলেই অনেক ঘুষ বা স্পিড মানির প্রবণতা কমে আসবে।