সংসদে ঋণদাতাদের পাশাপাশি এক হাজার ৯৫৬ শীর্ষ ঋণখেলাপির নামসংবলিত তালিকা উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বুধবার জাতীয় সংসদে ডা. মো. রুস্তুম আলী ফরাজীর খেলাপি ঋণবিষয়ক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তালিকা উপস্থাপন করেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি জানান, গত ১০ বছরে ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে ৮ হাজার ৭৯১ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। দেশের ৯১টি তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের মোট ছয় লাখ ছয় হাজার ৫০৩ কোটি ঋণ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৬৫ হাজার ৬০২ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হয়নি। এই টাকা খেলাপি ঋণ হিসেবে আখ্যায়িত করেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী এ সময় বেসিক, সোনালী,ফারমার্সসহ বিভিন্ন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকের ব্যাপারে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো বর্ণনা করেন। তিনি সংসদে জানান, বর্তমান সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের অর্থপাচারের ঘটনা ভোলেনি।
ফিরোজা বেগম চিনুর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, খেলাপি ঋণ রোধ করতে সরকার খেলাপি গ্রাহকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সব ব্যাংকের ঋণ আদায়ের ইউনিটকে শক্তিশালী করতে বলা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী জানান, সম্প্রতি ফারমার্স ব্যাংকের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সভায় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ঋণ পুনরুদ্ধারে বিশেষ কার্যক্রম হাতে নিয়ে আমানতকারীদের আস্থা অর্জনে তৎপর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমডিকেও অপসারণের পাশাপাশি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।
সানজিদা খানমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ঋণখেলাপি বা অনিয়মে জড়িতদের মধ্যে কেউ কেউ মারা গেছেন। অনেকে জেলে আছেন। আরও অনেকের বিচার চলছে। তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আমি কয়েক দিন আগেও সংসদে বলেছি – ব্যাংক ব্যবস্থায় এখনো কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা চলছে। তবে এটা সহজ হবে না। সময় সাপেক্ষ। এ জন্য একটু সময় লাগবে।
সংসদে আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, দেশে এখন করদাতার সংখ্যা ৩১ লাখ। তিনি একই সঙ্গে বলেন, এটা দেশের জন্য লজ্জাজনক। কারণ ১৬ কোটি মানুষের দেশে করদাতার সংখ্যা হওয়া উচিত এক কোটি ৬০ লাখ।
২০২১ সালের মধ্যে করদাতার সংখ্যা ৫০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্যের কথাও জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ৪ বছরে আয়কর আহরণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৬৩ হাজার ৭৮২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
ইসরাফিল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালের জুনে আয়কর বাবদ আহরণ করা হয়েছিল ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এই রাজস্ব আহরণ ২০১৭ সালের জুন মাসে প্রায় দ্বিগুণে দাঁড়ায়।