এক ধাপ এগোল ব্রেক্সিট
এক ধাপ এগোল ব্রেক্সিট

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তথা ব্রেক্সিট বাস্তবায়িত হলে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড আর উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যে কোনো কঠোর সীমারেখা আরোপ করা হবে না—গতকাল শুক্রবার এ ইস্যুতে ইইউর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। ব্রেক্সিট আলোচনার শুরুর পথে এ ইস্যুটি এত দিন কাঁটা হয়ে ছিল।

ইইউর সদর দপ্তর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে আলোচনা শেষে ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রধান জ্যঁ ক্লদ জাংকার এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মে গতকাল যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে মে বলেন, ‘উত্তর আয়ারল্যান্ডে কোনো কঠোর সীমানা আরোপ করা হবে না, সেটা আমরা নিশ্চিত করব। ’ যুক্তরাজ্যের অংশ হিসেবে থাকার প্রশ্নে উত্তর আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড—এই দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের অবিভক্ত দ্বীপ আয়ারল্যান্ড। মে আরো জানান, ইইউভুক্ত দেশগুলোতে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের এবং একইভাবে যুক্তরাজ্যে ইইউ নাগরিকদের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।

উত্তর আয়ারল্যান্ডের সীমানা নিয়ে যুক্তরাজ্য ও ইইউর মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানোটা কঠিন ছিল বলে মন্তব্য করেন ইসি প্রধান। সংবাদ সম্মেলনে জাংকার বলেন, ‘আজকের এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই একটা সমঝোতা। ’ তিনি মনে করেন, দুই পক্ষের প্রয়োজনীয় ‘বিরাট সাফল্য’ অর্জিত হয়েছে। এ সাফল্য প্রধানমন্ত্রী মের ‘ব্যক্তিগত সাফল্য’ বলে মন্তব্য করেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক।

ইইউ ও ইউকের এ সমঝোতার মধ্য দিয়ে ব্রেক্সিট আলোচনা শুরুর পথে এক ধাপ অগ্রগতি হলো বলে মনে করেন রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাডকার।

তিনি বলেন, ‘আইরিশ ইস্যুতে যথেষ্ট অগ্রগতি হওয়ায় আমি সন্তুষ্ট। ’ উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি অবশ্য মন্তব্য করেছে, এখনো আরো অনেক কিছু করার বাকি।

যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় জোট ছাড়া প্রসঙ্গে ২০১৬ সালের জুনে দেশে গণভোটের আয়োজন করেন সে সময়ের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। গণভোটে ৫১.৯ শতাংশ ভোটার জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দেয়। যুক্তরাজ্যের জনতার এ গণরায়ের পরিপ্রেক্ষিতে পরের বছর ২৯ মার্চ সরকার ইইউতে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রেক্সিট প্রস্তাব উত্থাপন করে। নিয়মানুযায়ী প্রস্তাব উত্থাপনের দুই বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে ইইউ ছাড়ার সব প্রক্রিয়া শেষ করার ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের মূল ভূখণ্ড থেকে জলভাগ দ্বারা আলাদা হয়ে থাকা উত্তর আয়ারল্যান্ড ইস্যুর জটিলতায় এত দিন ধরে ব্রেক্সিট আলোচনার শুরুটা থমকে ছিল। এ ইস্যুতে গতকালের সমঝোতার মধ্য দিয়ে আলোচনার পথটা খুলল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যুক্তরাজ্য-ইইউ সমঝোতাবিষয়ক যৌথ প্রতিবেদনে উত্তর আয়াল্যান্ডের সীমানা প্রসঙ্গের পাশাপাশি বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, আলাদা কোনো বাণিজ্য চুক্তি না হলে উত্তর এবং রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার প্রচলিত আইন অনুসরণ করবে যুক্তরাজ্য। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।