দুই নারী অ্যাথলেটের উপর আজ চোখ থাকবে বাংলাদেশের অলিম্পিক দর্শকদের। সাঁতারে ৫০ ফ্রি স্টাইল ইভেন্টে নামবেন সোনিয়া আক্তার টুম্পা এবং ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডে ১০০ মিটার ইভেন্টে নামবেন শিরিন আক্তার। দুইজনেই হিটে লড়াই করবেন। বাছাইয়ে টিকলে দ্বিতীয় ধাপের বাছাইয়ে যাবেন; কিন্তু সেটা পারবেন কিনা তা বলা কঠিন। অনেকে আগাম বলে দিয়েছেন, অসম্ভব। কারণটা বোঝা তো সহজ। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক এবং মিরপুরের সুইমিংপুলের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে বড় হওয়া ক্রীড়াবিদদের অলিম্পিক গেমসের মতো ‘সাগরে’ এসে হাবুডুবু খাওয়া ছাড়া আর কি-ই বা করার থাকে!
হতাশ হওয়ার মতো কথা হলেও রিও অলিম্পিক গেমসের আসরে এসে সোনিয়া আক্তার টুম্পা কিংবা শিরিন আক্তারের মতো ক্রীড়াবিদদের যেন অলিম্পিক গেমস ভিলেজের ভিড়েই হারিয়ে যাওয়ার যোগাড়। আর বড় বড় লাইটের আলোয়, দর্শকভরা স্টেডিয়ামে দর্শকদের বিকট আওয়াজের মধ্যে লড়াই করার আগেই তো ভয়-সংকোচে গুটিয়ে যান শিরিন-টুম্পাদের মতো অ্যাথলেটরা।
অনেকদিন ধরেই অলিম্পিকে বাংলাদেশের দৌড় হিট পর্যন্তই। বাছাইটা নিয়েই যত লড়াই। এখানে ভালো করতে পারলে কোনো দেশের চেয়ে নিজেদের কতোটুকু এগিয়ে নেয়া গেল, সেই রেজাল্টের খাতা দেখতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন খেলোয়াড়রা। হিটে ভালো করার আত্মবিশ্বাসটুকুরও ঘাটতি রয়েছে তাদের। কারণ বাংলাদেশ থেকে রিও অলিম্পিকে যাওয়ার আগে সত্যিকার অর্থে এই সব ক্রীড়বিদের সেভাবে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়নি। ‘ওয়াইল্ডকার্ডে’র (অংশগ্রহণের বিশেষ সুযোগ) দয়া নিয়ে যেখানে খেলতে হয়, সেখানে ফেডারেশনগুলোও সেভাবে নজর দেয় না। প্রয়োজনের কথা জানালেও ফেডারেশনগুলো আগ্রহ দেখায় না।
জানা গেছে, আরচারি, শ্যুটিং ও গলফের জন্য কোচ আনা হয়েছে রিও অলিম্পিক গেমসে; কিন্তু অ্যাথলেটিকস ও সাঁতারে আনা হয়েছে কর্মকর্তা। তারা এসেছেন দলনেতা, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন-বিওএ-এর অতিথি হিসাবে। অ্যাথলেটিকস এবং সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এসেছেন অলিম্পিক গেমস উপভোগ করতে! তারা তো আসতেই পারেন; কিন্তু ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে কোচ থাকার অর্থ হচ্ছে পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পরীক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষক থাকার মতো। অথচ অলিম্পিকে এসে ক্রীড়াবিদরা একা একা অনুশীলন করছেন। কি করছেন, কতটুকু করতে পারছেন ভুল দেখিয়ে দেওয়ারও কেউ নেই। এ ব্যাপারে শিরিন-টুম্পাদের কাছে কোনো প্রশ্নও করা যায় না। জানতে চাইলে তারা এড়িয়ে যান। বলেন, উপর থেকে বিধি-নিষেধ রয়েছে। সত্যি, অলিম্পিক গেমসের মতো ‘অথৈ সাগরে’ টুম্পা-শিরিনরা যেন একেকটা দিশাহারা নৌকার মতো ভাসছেন!