২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ১৪ বছর পর

0
801
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ১৪ বছর পর
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ১৪ বছর পর

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে আজ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা মামলায় ১৪ বছর পর আজ ঘোষণা করা হবে রায়।পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন  অস্থায়ী এজলাসে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন এ রায় ঘোষণা করবেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে একই বিচারক রায় ঘোষণার এ তারিখ ঠিক করেন।

১৪ বছরের মধ্যে দুই দফায় তদন্তে ৬ বছর, আর অবশিষ্ট ৮ বছরের মধ্যে ১৭৫৪ কার্যদিবস চলে মামলা দুটির বিচারকাজ। রাষ্ট্রপক্ষ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি এবং আসামিপক্ষ খালাসের দাবি করেছে। দুই মামলায় মোট আসামি ছিল ৫২ জন। ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় এখন আসামি ৪৯ জন। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, আমরা আসামিদের স্বীকারোক্তি, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিক ও ডকুমেন্টারি সাক্ষীর মাধ্যমে সব আসামির বিরুদ্ধে সন্দেহের ঊর্ধ্বে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি ট্রাইব্যুনাল আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করবেন।রাষ্ট্রপক্ষের অপর আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, রাষ্ট্রীয় মদদে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। একটি চেইন অব কমান্ডের নির্দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে ও পরে কাজ করেছে আসামিরা। সেই হিসাবে সবাই সমান অপরাধী। তাই সব আসামির মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি প্রত্যাশা করছি।
মামলার অন্যতম আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার স্টেট ডিফেন্স ল ইয়ার বা রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আবুল কালাম মো. আক্তার হোসেন তার মক্কেলের কী রায় প্রত্যাশা করেন এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য থেকে বিরত থেকেছেন।আরেক আসামি বিএনপি জোট সরকারের আমলের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তার আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বাবর সাহেবকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় আরও ১২ আসামি স্বীকারোক্তি দিলেও তাতে বাবর সাহেবের নাম বলেননি। শুধু মুফতি হান্নানের প্রশ্নবিদ্ধ স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বাবর সাহেবকে দণ্ড দেওয়া ঠিক হবে না।খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব) সাইফুল ইসলাম ডিউকের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আমরা মনে করি মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তি দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির যেসব নেতাকে আসামি করা হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষ তাদের কারো বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আমার বিশ্বাস, তারা সবাই খালাস পাবেন।সাবেক উপমন্ত্রী আবদুুস সালাম পিন্টুর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম তারা মিয়া বলেন, তার মক্কেলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তাই তিনি মনে করেন, তার মক্কেল খালাস পাবেন।মামলার আসামি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় প্রথমে একটি মামলা হলেও চার্জশিট হয় ২টি। একটি বিস্ফোরক আইনে, অন্যটি দণ্ডবিধি আইনে। দুই চার্জশিট মিলিয়ে মোট আসামি ছিল ৫২ জন। তাদের মধ্যে অন্য মামলায় তিন আসামির ইতোমধ্যেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এ জন্য এ তিনজনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে মোট আসামি ৪৯ জন, যারা প্রত্যেকেই দণ্ডবিধি (হত্যা) মামলার আসামি। তাদের মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় আসামি ৩৮ জন।মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদ-াদেশ পেয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ। হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান এবং শরিফ শাহেদুল ইসলাম বিপুল ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেয়েছেন। তাদের তিনজনের রায়ও কার্যকর হয়েছে।আসামিরা কে কোথায়
৪৯ আসামির মধ্যে ৩১ জন কারাগারে এবং ১৮ জন পলাতক। কারাবন্দিদের মধ্যে ৮ জন জামিনে ছিলেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রায়ের তারিখ ধার্য হওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করেন। তারা হলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার আমলের তিন আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী; তৎকালে মামলাটির তদন্তকারী তিন তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান, এএসপি আবদুুর রশীদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।কারাবন্দি অন্য ২৩ আসামি হলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার আমলে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের মহাপরিচালক আবদুর রহিম ও রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী; লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুুস সালাম পিন্টু, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদতউল্লাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহমেদ তামিম, মইনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হাসান সুমন, মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জল ওরফে রতন, হরকাতুল জিহাদ নেতা আবদুুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ ওরফে জিএম, শেখ আবদুস সালাম, আবদুুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া এবং কাশ্মীরের নাগরিক আবদুুল মাজেদ ভাট।পলাতক ১৮ আসামি হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, মুফতি আবদুুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, আবদুস সালাম পিন্টুর দুই ভাই বাবু ওরফে রাতুল বাবু ও মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন, মো. খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, লিটন ওরফে মাও. লিটন ওরফে দোলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, পুলিশের সাবেক ডিসি (পূর্ব) মো. ওবায়দুর রহমান, ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, লে. কর্নেল (অব) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার ও মেজর (অব) এটিএম আমিন।কার কী দণ্ডের অভিযোগে বিচার হয়
দুই মামলাতেই তারেক রহমানসহ ৩৮ আসামির মৃত্যুদণ্ডের ধারায়; ১১ সরকারি কর্মকর্তার দণ্ডবিধির মামলায় সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ডের ধারায় এবং অবশিষ্ট দুই কর্মকর্তা এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম ও রেজ্জাকুলের মৃত্যুদ-ের ধারায় মামলা হয়েছে।মামলা
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার একদিন পর অর্থাৎ ২২ আগস্ট সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। সেখানে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। একই দিন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল এবং দলটির কেন্দ্রীয় নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী মতিঝিল থানায় দুটি এজাহার করেন।পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও এসএম কামাল একই থানায় পৃথক ৩টি এজাহার দায়ের করেন। এসব এজাহার পরবর্তী সময়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে থানায় নথিভুক্ত করা হয়। এসব এজাহারে আসামি হিসেবে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। এগুলো পরবর্তী সময়ে পুলিশের দায়ের করা মামলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়।তদন্ত
২০০৪ সালের ২২ আগস্ট পুলিশের করা মামলায় মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই আমির হোসেনকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে তাৎক্ষণিক নিয়োগ করা হয়। তিনি তদন্তভার পেয়ে ওইদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গ্রেনেডসহ অন্যান্য আলামত ঘটনাস্থল থেকে তিনি জব্দ করেন। এ ছাড়া মৃতদেহগুলোর সুরতহাল প্রস্তুতসহ ময়নাতদন্তের জন্য সেগুলো মর্গে পাঠান। স্বজনের শনাক্তকরণের মাধ্যমে লাশ হস্তান্তর এবং অশনাক্তকৃত লাশগুলো আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে দাফনের জন্য হস্তান্তর করেন তিনি।২৩ আগস্ট মামলাটির তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওপর হস্তান্তর করা হয়। তৎকালীন ডিসি ডিবির নির্দেশে ইন্সপেক্টর সামছুল ইসলাম মামলাটির তদন্তভার নেন। দুদিন পর অর্থাৎ ২৫ আগস্ট মামলার তদন্তভার সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপির নির্দেশক্রমে এএসপি আবদুুর রশিদের ওপর মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়।তিনি ২০০৪ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০০৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ বছর ৪ মাস ১ দিন তদন্তকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ খসড়া মানচিত্র অঙ্কন ও সূচিপত্র প্রস্তুত এবং ৬৪ সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন; তাদের জবানবন্দি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করেন। এ ছাড়া তিনি আসামি জজ মিয়া টেন্ডল, আবুল হাশেম রানা ও শফিকুল ইসলামসহ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেন। যাদের মধ্যে জজ মিয়া টেন্ডল, আবুল হাশেম রানা ও শফিকুল ইসলামকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি করান। অবশ্য জজ মিয়ার ওই স্বীকারোক্তি পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে ‘জজ মিয়া নাটক’ হিসেবে পরিচিতি পায়।এ তদন্ত কর্মকর্তার তদন্তকালে ইন্টারপোল ও এফবিআই পৃথক তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে; ঘটনাস্থল পরিদর্শন, আলামত পর্যালোচনা করে। কিছু আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ইন্টারপোল সঙ্গে নিয়ে যায়, পরীক্ষা শেষে একটি রিপোর্টও পাঠায়। এএসপি আবদুর রশিদের তদন্তকালে ২০০৫ সালের ৫ নভেম্বর মুফতি হান্নান গ্রেপ্তার হলেও তাকে তিনি এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখাননি।তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি আবদুর রশিদ অবসরে যাওয়ায় ২০০৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর তদন্তভার পান সিআইডির এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান। তিনি ২০০৭ সালের ২২ আগস্ট পর্যন্ত ১ বছর ৮ মাস ২৮ দিন মামলাটি তদন্ত করেন। তার তদন্তকালে ২০০৭ সালের ৫ জুন কক্সবাজারের চকরিয়া থানার বাসিন্দা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ইঞ্জিনিয়ার বদর আজিজউদ্দিন ঢাকা সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, একই দলের নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা আব্বাস, মোসাদ্দেক আলী ফালু, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, বরকতউল্লাহ বুলু, আমানউল্লাহ আমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী ও মোদাব্বির হোসেনসহ ২৮ জন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ করেন।ওই মামলা সিএমএম আদালত পুলিশের দায়ের করা মামলার সঙ্গে একত্রে তদন্তের নির্দেশ দেন। তার তদন্তকালে ২০০৬ সালের ১৭ নভেম্বর মুফতি হান্নান ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও তাকে গ্রেপ্তার দেখাননি। তার তদন্তকালীন তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন।    মুন্সী আতিকুর রহমানের পর ২০০৭ সালের ২২ আগস্ট মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফজলুল কবির। তিনি ১০ মাস ১৭ দিন তদন্ত শেষে আদালতে প্রথম চার্জশিট দাখিল করেন। ফজলুল কবির মামলাটির তদন্তকালে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি মুফতি হান্নান, মহিবুল্লাহ অভি, শরীফ শাহেদুল ইসলাম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর এবং অন্য মামলায় গ্রেপ্তার আসামি আবুল কালাম আজাদ বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম ও রফিকুল ইসলাম সবুজকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।এ ছাড়া তিনি আসামি আরিফ হাসান সুমন ও সাহাদাতউল্লাহ জুয়েলকে সরাসরি গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ওই আসামিদের মধ্যে সাহাদাতউল্লাহ জুয়েল ছাড়া মুফতি হান্নানসহ অপর আসামিরা এ মামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। তদন্ত শেষে এই কর্মকর্তা ২০০৮ সালের ১১ জুন দ-বিধি আইনে একটি এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি চার্জশিট আদালতে দেন। ওই চার্জশিটে ৪০৮ জনকে সাক্ষী করে আবদুস সালাম পিন্টু ও মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।বিচারকার্য
চার্জশিট হওয়ার পর সরকার মামলা দুটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। সে অনুযায়ী ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসে মামলা দুটি। একই বছরের ২৯ অক্টোবর ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক মাসদার হোসেন আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন।এরপর ট্রাইব্যুনাল ওই বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে ৯ জুন পর্যন্ত মামলার বাদী এসআই শরীফ ফারুক আহমেদসহ ৬১ জনের সাক্ষ্য নেন। এরপর মামলা দুটির বিচারের স্থান ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের ৩ তলার পরিবর্তে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে একটি ভবনে নেয় সরকার। সেখানে ২০০৯ সালের ২৫ জুন থেকে ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম শুরু করেন। ওইদিনই রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান মামলা দুটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন।হামলায় ব্যবহার করা আর্জেস গ্রেনেডের উৎস, জোগানদাতা ও মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন বলে আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন। শুনানি শেষে একই বছরের ৩ আগস্ট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক মাসদার হোসেন রাষ্ট্রপক্ষে অধিকতর তদন্তের আবেদন মঞ্জুর করেন।অধিকতর তদন্ত : মামলা দুটি অধিকতর তদন্তের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ হন। তিনি ২০০৯ সালের ১২ আগস্ট থেকে ২০১১ সালের ২ জুলাই পর্যন্ত ১ বছর ১০ মাস ২০ দিন তদন্ত করেন। তার তদন্তকালে ৩ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। এ ছাড়া কারাগারে থাকা মুফতি আবদুুল হান্নান নিজেই আবেদন দিয়ে দ্বিতীয় স্বীকারোক্তি দেন। এই তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটিতে দুই দফা তদন্তের পর্যায়ে মোট ১৩ আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।পুনরায় বিচার শুরু : সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের পর ২০১২ সালের ১৮ মার্চ সম্পূরক চার্জশিটের ৩০ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন। পরবর্তী ৯ এপ্রিল থেকে পুনরায় শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। মামলা দুটিতে মোট চার্জশিটভুক্ত সাক্ষী ছিল ৪৯১ জন। রাষ্ট্রপক্ষ চার্জশিটের বাইরের আরও ২০ সাক্ষীকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনাল থেকে অনুমতি নেন।সে হিসাবে রাষ্ট্রপক্ষের মোট সাক্ষী ছিল ৫১১ জন। যাদের মধ্যে ৬ জন তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ২২৫ জনের সাক্ষ্য ২০১৭ সালের ৩০ মে পর্যন্ত গ্রহণ করে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। মামলাটিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম ভিকটিম হিসেবে সাক্ষী হলেও সাক্ষ্য দেননি। সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রায় ৫ বছর ৯ মাস সময় অতিবাহিত হয়।  আত্মপক্ষ শুনানি : সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত হওয়ার পর ২০১৭ সালের ১২ জুন থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত এক মাস আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জামিনে ও কারাগারে থাকা ৩১ আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বিচার প্রার্থনা করেন। ওই বছর ১২ জুলাই থেকে ১১ অক্টোবর ৩ মাস কারাগারে থাকা ২৩ আসামির মধ্যে ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দেন।যুক্তিতর্ক শুরু : ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। ওইদিন থেকে রাষ্ট্রপক্ষ ওই বছর ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫ কার্যদিবস ঘটনার ওপর যুক্তি উপস্থাপন করে। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি আসামি পক্ষ মামলার ঘটনা ও ল পয়েন্টের ওপর যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে, যা ৮৯ কার্যদিবস হওয়ার পর গত ৫ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ ল পয়েন্টের গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫ কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপন করে। এর পর আসামি পক্ষের গত ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর ২ কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপন শেষে বিচারক রায় ঘোষণার দিন ১০ অক্টোবর ঠিক করেন।রাষ্ট্রপক্ষের হিসাব অনুযায়ী মামলা দুটি বিচারিক আদালতে আসার পর (মাঝে অধিকতর তদন্তের সময় বাদে) চার্জগঠন থেকে যুক্তি উপস্থাপন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৭৫৪ কার্যদিবস সময় ব্যয় হয়, যার মধ্যে মুফতি হান্নানসহ ৪ আসামি উচ্চ আদালতে যাওয়ায় ২৯৪ কার্যদিবস ট্রাইব্যুনাল বিচারকাজ করতে পারেননি।

সূত্র : আমাদের সময়