বাংলাদেশমুখী মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জনস্রোত কমার কোনো লক্ষণ নেই। এরই মধ্যে সে দেশের মংডু, বুচিডং ও রাচিডং টাউনশিপ (জেলা) এলাকার অন্তত ১৫০ গ্রাম রোহিঙ্গাশূন্য হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব গ্রামের অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে পুড়িয়ে ছাই করেছে সে দেশের সরকারি বাহিনীর লোকজন ও সংখ্যাগরিষ্ঠরা। তবে ওই তিন জেলা শহরের সদরে সরকারি স্থাপনা ও কার্যালয়ের পাশে এখনো কিছু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষ চরম বিপন্ন অবস্থায় টিকে রয়েছে।
রাখাইনের (আরাকান) অন্য জেলাগুলোতেও সহিংসতা শুরু হওয়ায় সেখান থেকেও বিপন্ন মানুষ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসাতে শুরু করেছে। পালিয়ে আসা মিয়ানমারের নাগরিক, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে বাংলাদেশ সরকার বা আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা- কারো কাছেই পালিয়ে আসা মানুষের প্রকৃত কোনো সংখ্যা নেই। নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রবেশ না করানোয় এই সমস্যার সৃষ্টি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় স্থান দিয়ে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করে চলেছে। পালিয়ে এসেছেন ৫ লাখ!
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এক রোহিঙ্গা নেতা ও সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির এক সময়ের কর্মী বলছিলেন, তিন জেলার অন্তত ১৫০টি গ্রামের কোনো রোহিঙ্গা আর সে দেশে নেই।
প্রতি গ্রামে কম করে হলে তিন হাজারের মতো মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষের বাস ছিল। কোনোটায় আবার ২৫ হাজার। সব মিলিয়ে কমপক্ষে পাঁচ লাখ মানুষ এরই মধ্যে বাংলাদেশে এসেছে। তারা কেউই বাংলাদেশি বা বাংলাভাষী নয়। শতশত বছর ধরে তারা বংশ পরাক্রমে সে দেশে বাস করছেন এবং রোহান ভাষায় কথা বলছেন। রোহান ভাষার সঙ্গে চট্টগ্রামের ভাষার হয়তো কিছুটা মিল আছে, কিন্তু তা বাংলা ভাষা তো নয়!
একাধিক আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারাও অনুমান করছেন এরই মধ্যে সীমান্ত পেরুনো রোহিঙ্গাদের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। কিন্তু তা পুরোটাই অনুমাননির্ভর হওয়ায় আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউই। তবে জাতিসংঘ বলছে, এই সংখ্যা তিন লাখের অনেকখানি বেশি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে। তার আগে প্রবেশের মাত্রা কমতে হবে।