৬৬ বছর পেরিয়ে ৬৭- তে পা রাখল বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠা বাঙ্গালিদের অধিকার আদায়ে ১৯৪৯ সালের এই দিনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে জন্ম হয় এই দলটির।
এরপর থেকে আওয়ামী লীগ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে নিয়েছে একেকটি ইতিহাস। ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও ৭১’র মুক্তিযুদ্ধসহ সবক্ষেত্রেই রয়েছে এই দলটির ভূমিকা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ নানা সংগ্রামে আওয়ামী লীগ ছিল অগ্রগণ্য। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ তারা রাষ্ট্রক্ষমতায়। ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজগার্ডেনের একটি বাসভবনে রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরবর্তীকালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক একটি দল হিসেবে জনগণের সামনে আসে আওয়ামী লীগ।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় শামসুল হককে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরই নেতৃত্বে ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান ও ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ সংঘঠিত হয়। ৬২ সালে গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৬৬ সালের ৬-দফার আন্দোলনের পর ৭০’র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এর পরেও পাকিস্তানি শাসকরা ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করে। ফলে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও এদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানিদের বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে উপহার দেয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা ও ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শুন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। এর পর দলের মধ্যে একাধিক ভাঙ্গন দেখা দেয়। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। তিন দশক ধরেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ে আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি তিন বার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। এ সময়গুলো খুব বেশি সহজ ছিল না দলের জন্য। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগকে নানামুখী ভাঙ্গন ও ষড়যন্ত্রের কবলে পড়তে হয়েছে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পরবর্তিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এতে ভাঙ্গনের মুখোমুখি হতে হয় দলটিকে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাসহ প্রথম সারির অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার এবং একাংশের সংস্কার তৎপরতায় কিছুটা সঙ্কটে পড়ে দলীয় কার্যক্রম। তবে সব প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও মহাজাট বিজয় অর্জন করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংবিধান রক্ষার নির্বাচন করে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা, দারিদ্র্য মুক্ত, আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর সুখী, সমৃদ্ধ ডিজটাল বাংলাদেশ- গড়াসহ বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: ২৩ জুন মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দলটি। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনে সূর্য উদয়ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এরমধ্যে রয়েছে সকাল ৭ টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন ও সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, পায়রা উন্মুক্ত ও বেলুন উড়ানো হবে। বিকেল ৩ টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দলের পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ও বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল জেলা, উপজেলাসহ সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।