প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আজকে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, পৃথিবীর সব ধর্মের ক্ষেত্রেই একটি সুবিধাবাদী শ্রেণী তাদের নিজেদের মতো করে ধর্মের ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে সুকৌশলে কায়েমী শাসক শ্রেণী লাভবান হচ্ছে। তিনি বলেন, ধর্মের উপর ভিত্তি করেই পৃথিবীতে অনেক মহান ব্যক্তি মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেছে।
পক্ষান্তরে এর বিপরীতে অনেক ধর্মান্ধ অসম্পূর্ণ মনোভাবা ব্যক্তি এবং নিষ্ঠুর প্রকৃতির স্বেচ্ছাচারী শাসকের আবির্ভাবও মানব সমাজ প্রত্যক্ষ করেছে এবং এখনও আবির্ভূত হচ্ছে। “বৌদ্ধ ধর্মের আলোকে বিশ্বশান্তি” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রাজধানীর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে গতকাল বুধবার এই সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংঘনায়ক ধর্মাধিপতি শুদ্ধানন্দ মহাথের।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা যদি সারা পৃথিবীর বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার দিকে আলোকপাত করি তাহলে সব জায়গাতে যে দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ, বিগ্রহ এবং ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে পাই তার প্রায় প্রতিটির পেছনেই রয়েছে ধর্মীয় কারণ। আর এ কারণেই আমার মনে হয় বিভিন্ন ধর্মীয় যে মতবাদগুলো সেগুলো বিজ্ঞানের পরিপন্থী। বাহ্যিকভাবে দেখলে বিভিন্ন মতবাদের মধ্যে কিছুটা জাদু বিদ্যার সংমিশ্রণ, অতি প্রাকৃত বিশ্বাস, ছিদ্রাদ্বেষি বিরোধী বিশ্বাস প্রবণ (সহজে) উপলব্ধি হয়। এটা সত্য যে ধর্ম বেশিরভাগ মানুষকেই আকৃষ্ট করেছে, গুটি কয়েক মানুষ ছাড়া। পৃথিবীর প্রায় সব মানুষই ধর্মীয় মতবাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো মানব সমাজকে নৈতিক মূল্যবোধ মেনে চলার নির্দেশনা দিলেও এ মূল্যবোধ আজ প্রায়ই প্রয়োগ করতে দেখা যায় না। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকতে পারে না। ধর্ম মানুষের জন্য। বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এটা বোঝা যায় বিভিন্ন ধর্মের অনুষ্ঠানে সব ধর্মের মানুষেরা আসে।
তিনি বলেন, বুদ্ধ তাঁর জীবদ্দশায় জাগতিক সমস্ত দুঃখ মুক্তির লক্ষ্যে প্রথাগত চেতনায় বিরুদ্ধে অনন্য বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তাই এ দর্শনকে দুঃখ মুক্তির দর্শন বলা হয়। নিরলস গতিশীল সাধনার মাধ্যমে পার্থিব দুঃখ হতে মুক্তির উপায় অনুসন্ধানই হচ্ছে এই দর্শনের মূল সুর, যা প্রয়োগের ভিত্তিতে মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমধর্মী দর্শনের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন গৌতম বুদ্ধ।
আলোচনাসভায় শ্রীলংকার হাইকমিশনার যশোজা গুনাসেকেরা, ভিয়েতনামের হাই কমিশনার তানভান খোয়া, রামকৃঞ্চ মঠ ও রামকৃঞ্চ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দজী মহারাজ, নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা, মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক শায়লা ফারজানা বক্তব্য রাখেন।