মুদ্রানীতি ঘোষণার পর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। রোববার একদিনেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজারমূলধন কমেছে ৬ হাজার কোটি টাকা। আর সূচক কমেছে ১১৮ পয়েন্ট যা ২ শতাংশের বেশি। গত ৪ বছরের মধ্যে এটিই একদিনে সূচকের সর্বোচ্চ পতন।

রোববার মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় শেয়ারবাজার নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
এসময় তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে সুস্থ ধারা বজায় রাখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কার্যকরী নজরদারি অতিব জরুরি। না হলে অতীতের মতো এবারও প্রলুব্ধ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশংকা রয়েছে।

দুপর ১২টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর এ মন্তব্য করেন। সঙ্গে সঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকে। এরপর শুরু হয় শেয়ার বিক্রি। আর কমতে থাকে সূচক।

তবে মুদ্রানীতিতে শেয়ারবাজারের ব্যাপারে নেতিবাচক কিছু নেই। কারণ শেয়ারবাজারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বেসরকারিখাতের ঋণ প্রবাহ। কিন্তু বেসরকারিখাতের ঋণ প্রবাহ আগের ৬ মাসের মতো এবার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ বহাল রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মো. রকিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, মুদ্রানীতি ঘোষণা করার সময় শেয়ারবাজার নিয়ে গভর্নরের করা মন্তব্যের কারণেই বাজারে বড় দরপতন হয়েছে। তিনি এখন যে ধরনের নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন, তা এ মুহূর্তে কোনো দরকার নেই। নেতিবাচক কথা বলছে বাজারে তার একটি প্রভাব পড়বেই।

মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় গভর্নর আরও বলেন, শেয়ারবাজার ২০১০ সাল থেকে চলমান মন্দাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসছে। এই প্রক্রিয়া সুদৃঢ় করার জন্য কার্যকরী নজরদারি জরুরি।

এছাড়া অস্বাভাবিক দাম কমাতে মূল্য আয় অনুপাতের (পিই রেশিও) শেয়ারের বিপরীতে মার্জিন ঋণ যোগানের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা বাঞ্চনীয়। না হলে অতীতের মতো এবারও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা থাকবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।

গভর্নর বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে সঠিক খাতে ব্যবহার না করে কেউ অতিলোভে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কি না- সেদিকে নজর দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সম্প্রতি শেয়ারবাজারে কিছুটা গতি সঞ্চার হয়। এর ধারাবাহিকতায় রোববার দিনের শুরুতে মূল্য সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু হয়। তবে মুদ্রানীতির ঘোষণার পর সব কিছু পাল্টে যায়।

একের পর এক কোম্পানির দর কমতে শুরু করে। এর বড় প্রভাবে মূল্যসূচকে বড় পতন হয়। সে পতন থেকে আর বের হয়ে আসতে পারেনি বাজার। ফলে মূল্য সূচকের বড় ধরনের পতন দিয়েই শেষ হয় রোববারের লেনদেন।

লেনদেনের শুরুতে রোববার ব্রড সূচক ছিল ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্ট। দিনশেষে তা কমে ৫ হাজার ৫০০ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

সূচক কমেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। সিএসইর প্রধান সূচক রোববার ২৫২ পয়েন্ট কমেছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা য়ায়, রোববার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে ২৭৫টিরই দরপতন হয়েছে। অন্যদিকে ৪৭টির দাম বেড়েছে এবং ৫টি কোম্পানির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৩৭  কোটি ১৫ লাখ টাকা যা আগের দিনের চেয়ে যা ১৩২ কোটি টাকা কম।

অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬৮ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। লেনদেন হওয়া ২৬৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৪২টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ২১৭টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।