ধর্ষণকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার বন্ধের লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে কঙ্গোর চিকিৎসক ডেনিস মুকওয়ে এবং ইরাকের ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের অধিকারকর্মী নাদিয়া মুরাদ এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। গতকাল শুক্রবার নরওয়ের রাজধানী অসলোতে সংবাদ সম্মেলনে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান বেরিট রেইস-আন্ডেরসেন পুরস্কারজয়ী হিসেবে তাঁদের নাম ঘোষণা করেন।

বেরিট রেইস-আন্ডেরসেন বিজয়ীদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘যুদ্ধ ও সশস্ত্র সংঘাতের অস্ত্র হিসেবে ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ ও প্রচেষ্টার জন্য ডা. ডেনিস মুকওয়ে ও নাদিয়া মুরাদকে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হলো।’

তিনি আরো বলেন, ‘পুরস্কার বিজয়ীরা ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত গঠন ও মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।’

ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় কোচো গ্রামের ইয়াজিদি তরুণী নাদিয়া মুরাদকে ২০১৪ সালে আইএস জঙ্গিরা তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন ও ধর্ষণ করেছিল। জঙ্গিরা তাদের আস্তানায় তাঁকে যৌনদাসী হয়ে থাকতে বাধ্য করেছিল। বেশ কিছুদিন আইএসের যৌনদাসী হিসেবে থাকার পর  পালিয়ে আসা ২৫ বছর বয়সী এই তরুণী পরে পরিণত হন ইয়াজিদি জনতার মুক্তি আন্দোলনের প্রতীকে। মালালা ইউসুফজাইয়ের পর তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে শান্তিতে নোবেল পেলেন।

আর গাইনোকলজিস্ট ডেনিস মুকওয়ে কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় শহর বুকাভুতে পাঞ্জি হাসপাতালের পরিচালক। জীবনের বড় একটি সময় সহকর্মীদের নিয়ে যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের চিকিৎসা দিয়ে গেছেন তিনি। ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করা ওই হাসপাতালে হাজার হাজার নারী চিকিৎসা পেয়েছে, যারা নানাভাবে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে। বলা যায়, যুদ্ধে বা সশস্ত্র সংঘাতে যৌন সহিংসতার শিকার রোগীদের সাহায্যের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তিনি।

নোবেল শান্তি পুরস্কার ধর্ষণকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি হিসেবে মনে করেন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ আহমেদ জিয়াউদ্দিন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এই পুরস্কারের মাধ্যমে এই অপরাধ শুধু স্বীকৃতিই পাবে না। এর মাধ্যমে এই ইস্যুতে সারা বিশ্বের নজর পড়বে এবং ধর্ষণের শিকার নারীদের বেদনা সবাই উপলব্ধি করতে পারবে।’ এই বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ এবং সর্ব-সম্প্রতি মিয়ানমারের মতো দেশে যারা আন্দোলন করছে, তারাও অনুপ্রাণিত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।