মিয়ানমার সফরকালে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করাও বারণ ছিল ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের জন্য। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ সফরে এসে এ দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কাছে তাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিবরণ শুনে পোপ এতটাই বিচলিত হয়েছেন যে নিপীড়কদের পক্ষে তিনিই ক্ষমা চেয়েছেন।
‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেই তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্যেও আজ সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি। ’
গত ২৭ নভেম্বর থেকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফরে প্রথমবারের মতো ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ উচ্চারণ করে পোপ বলেন, ‘আজ সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি রোহিঙ্গাদের মধ্যেও। যারা আপনাদের নিপীড়ন করেছে, আঘাত করেছে, তাদের নামে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি আপনাদের মহান আত্মার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ’
বিকাল পৌনে ৪টায় বিশেষভাবে সাজানো রিকশায় চড়ে রাজধানীর কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালে যান এবং মাঠে আয়োজিত সভায় যোগ দেন পোপ ফ্রান্সিস। ওই সময় অপেক্ষমাণ অতিথিরা তাকে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান। রিকশায় বসেই তিনি আনন্দময় এ পরিবেশ হাসিমুখে উপভোগ করেন। রিকশায় পোপকে দেখে ভ্যাটিকান থেকে আসা নিরাপত্তাকর্মীরা অবাক হয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। তাদের কাছে নতুন মনে হওয়ায় রিকশা নিয়ে তারা আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও নানা প্রশ্ন করেন।
বিকাল ৫টা ৪২ মিনিটে পোপ তার লিখিত বক্তব্য রাখেন। প্রায় ১১ মিনিট বক্তব্য রাখেন নিজ দেশের ভাষায়। বক্তব্যে তিনি বিশ্বের শান্তি কামনা করেন। বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তিনি ভালোবাসা জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ১৮ জন প্রতিনিধিকে সাক্ষাৎ দিয়ে এক এক করে তাদের দুর্ভোগের কথা শুনেছেন পোপ ফ্রান্সিস। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আর্চবিশপ হাউসের বাগানে আন্তর্ধর্মীয় ও আন্তর্মাণ্ডলিক সমাবেশে বক্তব্য ও প্রার্থনা শেষে মঞ্চে রোহিঙ্গাদের ডেকে নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু। পোপ মাথা নুইয়ে তাদের হাতে হাত রেখে দুর্দশার কথা শোনেন।
এ ছাড়া গতকাল ক্যাথেড্রাল পরিদর্শন এবং বিশপদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। ঢাকায় আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ শনিবার বিকেল ৫টার দিকে রোমের উদ্দেশে পোপের ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।