সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারা সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজ্জা চৌধুরী এবং গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার এ বৈঠক হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বাসায় এ বৈঠক শেষে নেতারা ঐক্যের ঘোষণাটি দেন।

দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ও সুশাসনের জন্য নেতারা বৈঠকে ঐকমত্য পোষণ করেন। যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে এই কমিটি গঠন করা হবে।

এর আগে বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত যুক্তফ্রন্টের নেতারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট বি চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে নেতারা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তাঁরা ৭ দফা প্রস্তাব চূড়ান্ত করেন।

দফা সাতটি হচ্ছে—জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধী দল বাদ দিয়ে সকল সমমনা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলসমূহকে এক করা; বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সভা-সমিতির স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা; নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা; রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করার জন্য সংসদ ও সরকারের ভারসাম্য নিশ্চিতকরণ; নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ও নির্বাচনের পূর্বে সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং মন্ত্রিসভা বাতিল ঘোষণা। শেষ দফায় বলা হয়, এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো দলের কর্মীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না এবং তফসিল ঘোষণার আগে সকল ছাত্র-ছাত্রী ও রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। যুক্তফ্রন্টের এই বৈঠক শেষে নেতারা গণফোরাম সভাপতির বাসায় আসেন।

বৈঠকে তিনদলীয় জোট যুক্তফ্রন্টের তৈরিকৃত প্রস্তাব এবং গণফোরামের পৃথক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং ড. কামাল হোসেন। এ সময় গণফোরামের পক্ষ থেকেও সাত দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এসব প্রস্তাবনার সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের প্রস্তাবনার অভিন্নতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এসব প্রস্তাবের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন, নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া, স্বাধীন ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন কমিশন গঠন, আমলাতন্ত্রের বিকেন্দ্রীকরণ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা এবং সংবিধানের সাত ধারা মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালনা করার প্রস্তাব করেছেন ড. কামাল হোসেন।

বৈঠক শেষে ড. কামাল হোসেন ও বি চৌধুরী একসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বি চৌধুরী বলেন, ‘জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য একমত হয়েছি।’ তিনি জানান, তিনদলীয় যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পর কর্মসূচি প্রণয়নে কাজ করবে চার সদস্যের একটি সাব-কমিটি।

বৈঠকে আ স ম আবদুুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুুল মান্নান, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুুল মালেক রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মুহম্মদ মনসুর আহমেদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।