মমতার নেতৃত্বে জোটে আছেন শারদ পাওয়ার, লালু প্রসাদ ও ফারুক আবদুল্লা, যোগাযোগ হচ্ছে কংগ্রেসের সঙ্গেও । ভারতের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপির ভোট আটকাতে বিরোধী দলগুলো একটি বৃহত্তর ফ্রন্ট গঠনের কাজ শুরু করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ জোটের উদ্যোক্তা।
‘ফেডারেল ফ্রন্ট’ নামের এ জোটটি হবে মূলত নির্বাচনী জোট। বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির বিপরীতে প্রার্থী দেবে জোটটি। আপাতত সমঝোতা হয়েছে যে জোটের যেসব দল রাজ্যে শক্তিশালী, সংশ্লিষ্ট ওই রাজ্যে একক প্রার্থী দেয়া হবে বিজেপির বিরুদ্ধে।
ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এখন শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ সামনে আসছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাও আশানুরূপ নয়। সংসদ চালাতে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে সরকারকে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে সরকারবিরোধী বৃহত্তর জোট গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হল রাজধানীতে।
নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই একটি ‘ফেডারেল ফ্রন্ট’ গড়ার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন মমতা। কিন্তু সেই চেষ্টা শুরুতেই ভেস্তে যায়। এক বছর পরে আবার এ ধরনের উদ্যোগ নিলেন মমতা।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শুধু মমতাই নন, মুলায়ম সিংহ যাদব, নীতীশ কুমারের মতো আঞ্চলিক দলের নেতারাও এখন বিভিন্ন রাজ্যের ভোটে বিজেপি ঠেকাতে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনে তত্পর। এই পরিস্থিতিতে সমপ্রতি সংসদে তৃণমূলের দফতরে বসে একটি ফ্রন্ট গঠনের বিষয়ে এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের সঙ্গে আলোচনা করেন মমতা। বৃহস্পতিবার আবার বৈঠক হয় পওয়ারের বাসভবনে।
বিজেপিবিরোধী নতুন এই জোটে মমতা ও পওয়ারের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে ফারুক আবদুল্লা ও লালুপ্রসাদের দলও। জোটকে শক্তিশালী করতে আগামীতে কংগ্রেসকেও এর অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, মমতা, মুলায়ম, নীতীশ কুমারের প্রতিনিধি শারদ যাদব ছাড়াও পওয়ারের বাসভবনে গতকালের ওই বৈঠকে যোগ দেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লা ও আরজেডির জয়প্রকাশ যাদব। বৈঠকে আম আদমি পার্টির কেউ উপস্থিত না থাকলেও তারাও এই ফ্রন্টের শরিক হওয়ার পথে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে এই জোটের কোনও একটি দল যখন যে রাজ্যে নির্বাচন করবে বাকিরা তাদের নিঃশর্ত সমর্থন দেবে। গতকালের বৈঠকে জোটের প্রথম কর্মপন্থাও ঠিক করা হয়। সামনের বিহারের নির্বাচনে জোটের পক্ষ থেকে নীতীশ ও লালুর দলকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিজেপিকে রুখতে এই জোটের প্রয়াস আদৌও সফল হয় কি না, তার প্রথম পরীক্ষা হতে চলেছে এই নির্বাচন। বিহার নির্বাচনে নীতীশ-লালু জোটের সমর্থনে নতুন জোট প্রচারেও নামবে।
জানা গেছে, বিজেপিবিরোধী জোটে আগামী দিনে কংগ্রেসকেও শরিক করে নেয়ার কথা ভাবছেন মুলায়মরা। কংগ্রেসের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকেই। জোটের নেতারা মনে করছেন, কংগ্রেস এই জোটে এলে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে বিজেপির জয় ঠেকানো সম্ভব হবে। তবে মমতার উপস্থিতির কারণে এই জোটে কোনও বাম দলকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর জোটের পরবর্তী বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার নতুন এই জোটের বৈঠকে আম আদমি নেতা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের যোগ দেয়ার কথা ছিল। তবে তিনি মমতাকে জানিয়ে দেন যে তার পক্ষে এ দিনের বৈঠকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। আম আদমি পার্টির নেতারা জানিয়েছেন, কেজরিওয়ালের পক্ষে পওয়ারের বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল আম আদমি পার্টি। তাতে নাম ছিল পাওয়ারেরও। তাই এখন পাওয়ারের বাড়িতে বৈঠক করতে গেলে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হবে দলকে। এছাড়া দলের সমর্থকদের কাছেও জবাবদিহি করতে হবে কেজরিওয়ালকে। তাই গতকাল মমতাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে এসেছেন তিনি। তবে অন্য কোন জায়গায় জোটের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন কেজরিওয়াল।