ভারত পাঁচটি বড়সড় আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে শিগগিরই। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রসহ ভারতের পাঁচটি প্রধান নদীতে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। সম্প্রতি ভারতের ইউনিয়ন মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি ভারতের সংবাদ মাধ্যম ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যেই আমি পাঁচটি বড় আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর জন্য ব্যয় হবে ৫ হাজার কোটি রুপি। ‘

কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো যে নদীগুলোতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে তার সবক’টিই বাংলাদেশের ওপর দিয়েও প্রবাহিত হয়েছে। নদীগুলোতে মানুষের যেকোনো ধরনের হস্তক্ষেপ প্রাণ ও প্রকৃতির বাস্তু সংস্থানের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলার পাশাপাশি বাংলাদেশের নদীপ্রবাহে তীব্র পানির সংকট সৃষ্টি করবে।

সম্প্রতি ভারতের মন্ত্রিসভায় যে রদবদল হয় তার ফলে দেশটির পানিসম্পদ, নদী উন্নয়ন এবং গঙ্গার পুনরুজ্জীবন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন নীতিন গড়কড়ি। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ এখন গঙ্গা নদী থেকে কাবেরি নদীতে পানি নিয়ে যাওয়ার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মুখিয়ে আছেন।

তিনি আরো জানান, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে অন্তদেশীয় জলপথ উন্নয়নের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। যা এখনো চলছে।

 

বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতকে জানিয়ে দিয়েছে ভারত যদি ওই আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে তাহলে নদীর প্রাণ ও প্রকৃতিগত পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার পাশপাশি বাংলাদেশের নদীগুলোতে তীব্র পানির সংকট তৈরি করবে।

বাংলাদেশের পরিবেশবাদীরাও ভারতের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন। তাদের দাবি এর ফলে বাংলাদেশে মরুভূমির মতো অবস্থা তৈরি হবে।

পরিবেশবাদীরা বলেন, দুই দেশের ওপর দিয়েই প্রবাহিত এমন কোনো নদীর ওপর উজানের ভারত একতরফাভাবেই কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে না। ভাটির বাংলাদেশে এর কী প্রভাব পড়বে সে ব্যাপারে অবশ্যই একটা যৌথ প্রভাব মূল্যায়ন করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমি ভারতের এই ধরনের ধ্বংসাত্মক এবং নৃশংস চিন্তার তীব্র নিন্দা জানাই। যে ভাবনায় কোটি কোটি কৃষক এবং সুন্দরবনের ক্ষতির বিষয়টি অগ্রাহ্য করা হয়েছে। ‘

তিনি বলেন, ‘গঙ্গা নদী থেকে পানি সরিয়ে নিলে পদ্মায় তীব্র পানি সংকট দেখা দেবে। আর মিঠা পানির সরবরাহ কমে গেলে সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়ার ফলে লবণাক্ততার কারণে সুন্দরবন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আর ব্রহ্মপুত্র থেকে যদি পানি সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে বাংলাদেশে মরুভূমির মতো অবস্থা সৃষ্টি হবে। ‘

তিনি আরো বলেন, ‘গঙ্গা অববাহিকায় বাংলাদেশের আরো পানি দরকার। কিন্তু ভারতের আন্তনদী সংযোগগুলো বাস্তবায়িত হলে পদ্মায় তীব্র পানি সংকট তৈরি হবে। ‘ বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান জানান, সরকার ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।