প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা আর বোমা মেরে মানুষ হত্যা বরদাশত করা হবে না। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ওনার বিরুদ্ধে শুধু দুর্নীতির মামলা নয়, খুনের মামলাও দেওয়া হয়েছে। তিনি হুকুমের আসামি। কাজেই মানুষের রক্ত নিয়ে খেললে শাস্তি বাংলার মাটিতে হবেই হবে। একজন খুনির যে শাস্তি, তা তাঁকে পেতেই হবে।
গতকাল শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া জঙ্গিদের নেত্রী। জঙ্গিনেত্রীর স্থান বাংলাদেশে হবে না।
খালেদা জিয়ার কোনো আশা পূরণ হবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনার অনেক আশা ছিল। আপনি বোমা মারবেন, মানুষ খুন করবেন। কখনো কেউ এসে আপনাকে ক্ষমতায় বসাবে। কেউ আসে নাই। এত দিন আশা ছিল, বিদেশ থেকে কেউ এসে একেবারে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। তারাও স্পষ্ট বলে দিয়েছে, জঙ্গিবাদ এখানে গ্রহণযোগ্য না। মানুষ হত্যা বন্ধ করতে বলেছে। কাজেই এখন আছে কে তাঁর? কয়েকটা সন্ত্রাসী? সন্ত্রাসীদের নিয়ে তিনি ক্ষমতায় যাবেন? আন্দোলন সফল করবেন? বাংলাদেশের মানুষ তা হতে দেবে না।’
খালেদা জিয়ার নির্দেশে পেট্রলবোমা মারা হয়—এমন দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উনি অফিসে বসে থেকে পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ মারেন। প্রত্যেক জেলায় জেলায় ওনার দলের নেতা-কর্মীদের ফোনে নির্দেশ দেন। আর আমাদের দেশে একশ্রেণির লোক আছে, শিক্ষিত মানুষ। ইউনিভার্সিটির টিচারও আছেন। বিএনপি যতই অপরাধ করুক, খালেদা জিয়া যতই অপরাধ করুক, মানুষ হত্যা করুক, গুলি করুক, ওনারা নাকি চোখেই দেখেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বোমা হামলার সঙ্গে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও শিবির জড়িত। এদের মানুষ চেনে। কিন্তু কিছু লোক না চেনার ভান করে। এরা নানাভাবে বোমাবাজদের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করে। যারা বোমাবাজদের ঢাকার চেষ্টা করবে, নিরাপত্তা দেবে, তারাও সমান দোষে দোষী। তারাও অপরাধ থেকে পার পাবে না।
প্রধানমন্ত্রীর প্রায় ৩৫ মিনিটের বক্তব্যের বড় অংশজুড়েই ছিল বিএনপি, খালেদা জিয়া ও চলমান হরতাল-অবরোধ প্রসঙ্গ। সমাবেশ উপলক্ষে দুপুর থেকেই রাজধানী ও এর আশপাশের জেলাগুলো থেকে নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে থাকেন। অনেককে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থীদের ছবিসংবলিত ফেস্টুন বহন করতে দেখা যায়। সম্ভাব্য কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরাও মিছিল নিয়ে আসেন।
সমাবেশস্থলে মঞ্চের সামনে বসার ব্যবস্থা করে চারদিক বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। এটি ভরে সমাবেশস্থলে আসা অনেকেই আশপাশের রাস্তায়, উদ্যানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেন। প্রধানমন্ত্রী ও নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার সময়ও অনেককে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করে অন্য পথে আবার বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। সমাবেশে আসা যানবাহনগুলো রাস্তার পাশে রেখে দেওয়ার কারণে আশপাশে যানজটের সৃষ্টি হয়।
সভাস্থলে যেতে না পেরে বিকেল চারটার দিকে জনসভায় আসা লোকজন অবস্থান নেন টিএসসি, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ এলাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরান ঢাকা থেকে আসা এক নেতা বলেন, ‘মিছিল নিয়ে আসাটাই বড় কথা। জনসভায় থাকাটা বিষয় না। মিছিলে আইলে নেতাও খুশি হন। নেতার খুশিই আমাগো খুশি।’