পুরান ঢাকার দর্জি দোকানি বিশ্বজিত দাস হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল ও রাজন তালুকদারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। এরমধ্যে রাজন মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন।
একইসঙ্গে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছে আদালত। এরা হলেন মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, ইমদাদুল হক ওরফে এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন ও মীর মো. নূরে আলম লিমন। ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল রবিবার এ রায় দেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাইফুল ইসলাম ও কাইয়ুম মিয়া টিপু এবং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এএইচএম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। রায়ে বর্তমান ছাত্র রাজনীতির কড়া সমালোচনা করেছে হাইকোর্ট।

 

রায়ে পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মো. জাহিদুল হক এবং চিকিত্সক ডা. মো. মাকসুদ নিহত বিশ্বজিতের লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতের ক্ষেত্রে পেশাগত ও ফৌজদারি অসদাচরণ করেছেন কিনা তা তদন্ত করতে পুলিশের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, জাহিদুল নিহতের শরীরে একটি কোপের কথা উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে মাকসুদ জখমের স্থান সুরতহাল অনুযায়ী উল্লেখ না করে ভিন্ন স্থানের উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে বিশ্বজিতের শরীরে একাধিক জখমের কথা উল্লেখ করা হয়েছিলো। এর ফলে সুরতহাল ও ময়নাতদন্তে আঘাতের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে আসামিদের জবানবন্দি ও সাক্ষীদের বর্ণনার অসামঞ্জস্য দেখা যায়।

 

রায়ে বলা হয়, বিশ্বজিত্ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু তিনি কাণ্ডজ্ঞানহীন, নির্মম ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ওই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ ও স্থির চিত্র গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। যা দেখে আঁতকে উঠেছে মানুষ। এটা পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড না হলেও আসামিদের সম্মিলিত হামলার ফলেই বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

 

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভেবে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে ছাত্রলীগের একদল কর্মী বিশ্বজিেক পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। নিরীহ ওই যুবককে দিন-দুপুরে নৃশংসভাবে হত্যার দৃশ্য টেলিভিশনে দেখে আঁঁতকে উঠেছিল দেশের মানুষ। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক নিজামুল হক ৮ জনকে ফাঁসি ও ১৩ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। পরে মামলাটি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। এছাড়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আট দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। দীর্ঘ ১৫ কার্যদিবস শুনানি শেষে হাইকোর্ট গতকাল এই রায় দেন। রায়ে বলা হয়, যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ১১ আসামি পলাতক থাকায় তারা আপিল করার সুযোগ পাননি। ফলে তাদের বিষয়টি এই আদালতের বিবেচনায় নেওয়া হলো না। ফলে নিন্ম আদালত তাদেরকে যে দণ্ড দিয়েছিলো তাই বহাল রইল।