নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছিল সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। গতকাল বৃহস্পতিবার এই সিটিতে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হওয়া নির্বাচনে ভোট প্রদানের হারও ছিল উল্লেখযোগ্য। ৭৪.৩০ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। যাতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে কোনো রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই বিপুল ব্যবধানে জয়ী হলেন জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
কাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবেই চলে এই ভোটগ্রহণ। গত রাত সোয়া ১২টায় বেসরকারিভাবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তাতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা তাঁর নিকটতম আওয়ামী লীগ প্রার্থী শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ১৯৩টির মধ্যে সব কটি কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে জাতীয় পার্টির মোস্তফা (লাঙল) পেয়েছেন এক লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট, আওয়ামী লীগ প্রার্থী শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু (নৌকা) ৬২ হাজার ৪০০ এবং বিএনপি প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা (ধানের শীষ) পেয়েছেন ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট।
নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪। ভোট পড়েছে দুই লাখ ৯২ হাজার ৭২৩টি।
ভোট প্রদানের হার ৭৪.৩০ শতাংশ। ভোটাররাও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরে খুশি। আর নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করার মতো। কুয়াশায় মোড়া উত্তরের এ নগরীতে সকালে কনকনে শীতের মধ্যেও ঘর থেকে বের হয়েছিল তারা। রংপুর সিটিতে প্রথম নির্বাচন হয়েছিল ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর। আর গতকাল হলো দ্বিতীয় নির্বাচন। তবে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নগরপিতা নির্বাচনের ফলাফলে পরিবর্তনের আভাস স্পষ্ট। পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে হারালেও এবার হয়েছে উল্টো।
আগের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা ও রংপুর সিটি নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থী শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু এক লাখ ছয় হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রার্থী জাতীয় পার্টির মোস্তফাকে ২৬ হাজার ২৫০ ভোটে পরাজিত করেন। মোস্তফা ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত আরেক প্রার্থী এ কে এম আব্দুর রৌফ মানিক পেয়েছিলেন যথাক্রমে ৭৭ হাজার ৮৩৫ ও ৩৭ হাজার ২০৮ ভোট। আর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা পেয়েছিলেন মাত্র ২১ হাজার ২৩৫ ভোট। ঝন্টু ওই নির্বাচনে বিজয়ী হলেও জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থী মিলে যে ভোট পেয়েছিলেন তার তুলনায় তা কম ছিল.
নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম সংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মডেল নির্বাচন করার কথা আপনাদের আগে বলেছিলাম। রংপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে; এটি একটি মডেল নির্বাচন হয়েছে। কোনো ধরনের গোলযোগ, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ’
গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যের বরাতে রফিকুল ইসলাম বলেন, রংপুরে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট পড়বে বলে ধারণ করা হচ্ছে। তবে ভোটের ফলাফল শেষেই চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে।
পরে গতকাল সন্ধ্যায় রিটার্নিং অফিসার সুভাষ চন্দ্র সরকার জানিয়েছিলেন, ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। এর আগে দুপুরে তিনি পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন।
ইভিএমে ভোট পড়েছে ৬০.৮১ শতাংশ : বিকেলে সিইসি বলেন, নতুন ইভিএম সফল। রংপুরে ১৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে একটি কেন্দ্রে নতুন প্রযুক্তির ইভিএমে ভোট হয়েছে। এতে ৬০.৮১ শতাংশ ভোট পড়েছে।