Home Hot News Today বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি বই

বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি বই

মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য কেনা বইটির নাম জ্যাঁ লুই ভাঁস- সিক্সথ এডিশন (jean Louis Vincent-6th Edition)। একটিমাত্র কপি। কিনেছে নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ। যা বাংলাদেশের সবচেয়ে ‘দামি বই’ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী টাকায় বইটির দাম ৭ হাজার ৪৪৫ টাকা। কিন্তু আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ ‘সর্বনিু মূল্য’ হিসেবে বইটি কিনেছে ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকায়। টেন্ডারের মাধ্যমে বইটি সরবরাহ করেছে ‘অরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল’। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের মেডিকেল শিক্ষায় প্রয়োজন না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি শুধু অর্থ লোপাটের লক্ষ্যে অবিশ্বাস্য দাম দিয়ে কিনেছে এমনই কিছু বই। ৯৯৫ টাকা দামের বই কিনেছে ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকায়। ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকার বই কিনেছে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ টাকায়। ৬ হাজার ৬২৬ টাকার বই কিনেছে ৯ লাখ টাকায়। প্রকিউরমেন্ট নীতিমালাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এভাবে কেনা হয় ৬ কোটি টাকার বই। স্বাস্থ্য অধিদফতর, কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে বই কেনার দুর্নীতি নিয়ে যুগান্তরে গত বছরের ১ নভেম্বর সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর দুদক শুরু করে অনুসন্ধান। অনুসন্ধান পর্যায়ে ইতিমধ্যেই সব রেকর্ডপত্র হস্তগত হয়েছে। শেষ পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদও।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে বই ও যন্ত্রপাতি কেনার নামে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শক্তিশালী কয়েকটি চক্র। বই বিক্রি চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন ‘অরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল’র মালিক মাহবুবুল ইসলাম। কলেজ অধ্যক্ষকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে টেন্ডার পাতে চক্রটি। পরে টেন্ডারে শ্যালক হাসান মাসুদ এবং স্ত্রী আফসানা ইসলামকে ‘ডামি বিডার’ করে অবিশ্বাস্য মূল্যে প্রকারান্তরে নিজেই বাগিয়ে নেন কার্যাদেশ। সৌরভ বুক সেন্টার, অরবিটাল ইন্টারন্যাশনালসহ একেক সময় একেক টেন্ডারে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত মালিক মাহবুবুল ইসলাম। একটি নাম কালো তালিকাভুক্ত হলে টেন্ডারে অংশ নেন নতুন নামে। এভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে সর্বশেষ নোয়াখালীর আবদুল মালেক মেডিকেল কলেজকে অপ্রয়োজনীয় কিছু বই গছিয়ে দেন। হাতিয়ে নেন ৬ কোটি টাকা। এর আগে একইভাবে তিনি দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট, ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজেও পাইরেটেড ও পুরাতন সংস্করণের বই সরবরাহ করে অর্থ হাতিয়ে নেন বলে জানা গেছে। তবে একই কায়দায় বগুড়া মেডিকেল কলেজ এবং গাজীপুর মেডিকেল কলেজে বই সরবরাহের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। দুদকের অনুসন্ধানে সার্বিক বিষয়টি উঠে এলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে যাতে মামলা না হয় সে লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের তদবির চলছে। একই সঙ্গে রয়েছে অনুসন্ধানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং অসহযোগিতার অভিযোগ।