বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে একমত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার নয়াদিল্লিতে সৌজন্য বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী এ ঐকমত্য প্রকাশ করেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ তথ্য জানান।

ইহসানুল করিম জানান, বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশেরই বিশাল বাজার রয়েছে। একে অন্যের পণ্য বিক্রি করতেই পারে। আমরা দুই দেশ একসঙ্গে নিজেরাই অনেক কিছু করতে পারি। বিশাল বাজারকে কাজে লাগাতে পারলে দু’দেশেরই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। অন্যদের ওপর নির্ভরশীলতাও কমবে।

 মোদি এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। সেই সঙ্গে তিনিও একটি প্রস্তাব দেন। বলেন- প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে দুই দেশ যৌথ মহড়া করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সম্মত হন। তিনি বলেন, সিডর বা আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ, জলবায়ু ও পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সুন্দরবনের মতো গভীর বনাঞ্চল বাঁচাতে কাজে দেবে। নয়াদিল্লিতে বুধবার ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির শেষকৃত্যে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। মোদির সরকারি বাসভবন ৭ রেসকোর্স রোডে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছিটমহল বিনিময় এবং বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে স্বাক্ষরিত সাম্প্রতিক চুক্তিকে দুই প্রধানমন্ত্রীই স্বাগত জানান। তবে এসব বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হলেও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি প্রসঙ্গ দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় আসেনি। বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি শুভ্রা মুখার্জির শেষকৃত্যে যোগ দেয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে তিনি দ্বিপাক্ষিক সফরে ভারতে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান। স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ এগিয়ে চলায় সন্তোষ প্রকাশ করেন মোদি। তিনি বলেন, যে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার চেয়ে বাস্তবায়ন ‘অনেক কঠিন’। কোনো ‘সমস্যা ছাড়াই’ স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ায় এ ঘটনা বিশ্বের কাছে ‘দৃষ্টান্ত’ হয়ে থাকবে। চুক্তি বাস্তবায়নের এ ঘটনা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর জন্যও গবেষণার বিষয় হতে পারে। শেখ হাসিনাও চুক্তির বাস্তবায়নে দু’দেশের কর্মকর্তাদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার প্রশংসা করেন।
জুনে ঢাকা সফরকালে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’ পরিদর্শনের স্মৃতিচারণ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বলেন- সেখানে গিয়ে তিনি অভিভূত হয়েছেন। এ জাদুঘরের ডিজিটাইজেশন এবং আধুনিকায়নে প্রযুক্তি সহায়তা দেয়ার কথাও বলেন মোদি। তিনি বলেন, ‘যেদিনই বাংলাদেশ সরকার চাইবে, সেদিনই বিশেষজ্ঞরা সেখানে পৌঁছে যাবে।’ মোদি এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানান।
শুভ্রা মুখার্জির কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ের কথা বৈঠকে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘদিন তিনি নির্বাসনে ভারতে ছিলেন। তখন থেকেই প্রণব মুখার্জির পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্ক, যা দিন দিন আরও গভীর হয়েছে। তাই শুভ্রা মুখার্জির প্রয়াণের কথা শুনেই ‘ছুটে এসেছেন’।

দুই প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সময় শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল ছাড়াও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও পররাষ্ট্র সচিব জয়শংকর উপস্থিত ছিলেন।

 এর আগে শুভ্রা মুখার্জির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতারই সাক্ষাৎ হয়। তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসব নেতার মধ্যে ছিলেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা মনমোহন সিং, বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি, আমআদমি পার্টির প্রধান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রমুখ।

সংক্ষিপ্ত সফর শেষে স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার পথে রওনা হন। ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিং এবং বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান ।