ক্ষমতাসীন সরকার দেশ থেকে গণতন্ত্রের নাম নিশানা মুছে ফেলে দেশকে একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। একটি অনির্বাচিত সরকার সংসদের সার্বভৌমত্বকে প্রহসনে পরিণত করেছে। এই সরকার জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। দেশে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় বাংলাদেশের মাটি একটি গণ-অভ্যুত্থানের প্রসব বেদনায় উদ্বেল হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা কাজী জাফর আহমদ।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি একথা বলেন। কাজী জাফর আহমদ বলেন, বস্তুত দেশে আজ যেভাবে পুলিশি রাজত্ব চলছে, তা আমার ৬০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনো দেখিনি। শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের ফ্যাসিবাদী রাজত্ব কায়েম হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। এ পরিস্থিতিতে দেশে জাতীয় সরকার গঠনের সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে বলেও তিনি মনে করেন।
কাজী জাফর আহমদ বলেন, এই সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠেছে। একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে তারা শেষ রক্ষার চেষ্টা করলেও তা শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হবে তা অনিশ্চিত। নির্বাচন তাদের দিতেই হবে। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হবে কি না বলা যায় না। সার্বিক বিবেচনায় দেশে জাতীয় সরকার গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি জাতীয় সরকার অধিষ্ঠিত হতে পারে এবং সেই জাতীয় সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে দেশের প্রধান সমস্যাগুলো সমাধান করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আর তিনি বলেন, বিএনপি ও ২০ দলের ভাঙনের কোনো সম্ভাবনাই নেই। বরং এই ঐক্য দিন দিন আরো শক্তিশালী হবে। সরকারে যারাই থাকে তারা সব সময়ই নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল করার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ভাঙার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। এটি এখন আমাদের রাজনীতির একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ইতিহাস বলে কোনো সরকারই আজ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় সফল হয়নি। অধ্যাপক বি. চৌধুরী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাকে আমি অনেক দিন যাবত চিনি। তিনি আমার অগ্রজ। আমার কাছে তিনি অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি কখনো বিএনপি ভাঙার কথা চিন্তাও করবেন না। এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বরং বিএনপি যাতে মূল আদর্শ অনুসরণ করে সঠিক পথে থাকে এবং আরো শক্তিশালী হয় সেটাই তিনি বেশি চিন্তা করেন। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে; কিন্তু এটি ভাঙনের দিকে যাবে না । এই মতপার্থক্য বিএনপি বা ২০ দলের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি করবে না। আগামীতে ২০ দলে আরো চমক আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কাজী জাফর আহমদ বলেন, সম্প্রতি জাতীয় পার্টির ইফতার মাহফিলে বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আসুন এক সাথে বসি। কে ছোট ,কে বড় সেটা দেখার সময় নেই। তার এ আহ্বান ও বক্তব্যে আমি অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে একটি আন্তরিক সমর্থন লক্ষ্য করেছি। মোট কথা, বিরোধীদলগুলোর মধ্যে কোনো বিভাজন নয়, ঐক্যই হবে চূড়ান্ত লক্ষ্য। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রসঙ্গে বলেন, তার বাংলাদেশ সফর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, জনগণের প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় মানুষ হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বাংলাদেশে যেখানে একটি অনির্বাচিত সরকার অধিষ্ঠিত, যেখানে গণতন্ত্র নির্বাসিত, যেখানে ক্ষমতাসীন দল নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছেÑ সেখানে গণতন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত নরেন্দ্র মোদি এই সফরের মাধ্যমে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের ব্যাপারে অবদান রাখবেন এটা আশা করছি। তিনি যেভাবে সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বেগম জিয়ার সাথে দেখা করেছেন, ১৫ মিনিট একান্তে কথা বলেছেন, তা প্রশংসিত হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি কিংবা সোনিয়া গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী, রাজিব গান্ধী এরা সবাই ভারতের স্বার্থ অবশ্যই দেখবে। কিন্তু ইন্দিরা কিংবা সোনিয়া গান্ধী যেভাবে বন্ধুত্বের কথা বলে বিশেষ একটি পক্ষ নিতেন এখন হয়তো নরেন্দ্র মোদি সে প্রচেষ্টা নাও নিতে পারেন।
কাজী জাফর বলেন, ভারত বিরোধিতা আমাদের পার্টির লক্ষ্য নয়, আমরা কখনোই ভারত বিরোধী ছিলাম না। আমরা ভারতের সরকারের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে। আমাদের রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। আমরা ভারতের অন্ধ সমর্থক নই, বিরোধীও নই। ১৯৭১ সালে ভারতের জনগণ আমাদের পক্ষে ছিল, এবারো ভারতের জনগণের সমর্থন আমাদের প্রত্যাশা।