প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে দেশের সচেতন জনগণের সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। তাহলে কারো ভুল সিদ্ধান্ত এবং ব্যর্থতার জন্য জনগণকে কেন খেসারত দিতে হবে। কেন তাদেরকে পেট্রোল বোমায় মরতে হবে। কখনোই এ ধরনের কর্মকাণ্ড সহ্য করা যায় না। সুতরাং জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাস থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে এবং বিশ্বে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে আমি দেশের সকল সচেতন জনগণের সহায়তা চাই।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক-২০১৫ বিতরণ অনুষ্ঠানে ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে ১৫ বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে পদক তুলে দেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এবং একুশে পদকপ্রাপ্তদের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী, বিচারকগণ, সংসদ সদস্যবর্গ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ৬ বছরে দেশের অর্জিত উন্নয়নের ধারায় মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে, সেবা পাচ্ছে এবং সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। কিন্তু এখন বিএনপি-জামায়াত চক্র ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছে। তারা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মানুষের স্বপ্ন খান খান করে দিতে চায়। এটা কোন্ ধরনের রাজনীতি….। এটা রাজনীতি নয়। শেখ হাসিনা বলেন, অতীতেও আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু মানুষ হত্যা ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের জন্য আন্দোলন হয়নি। বরং আন্দোলনের মাধ্যমে হত্যা ও জনগণের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা জানি না, বিএনপি-জামায়াত চক্র কি ধরনের আন্দোলন করছে। তারা গোপন স্থান থেকে ঘোষণা দিচ্ছে এবং পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলা, সংস্কৃতি ও শিক্ষাসহ কোন ক্ষেত্রেই দেশ এখন পিছিয়ে নেই। আমরা দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হলে তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা থাকতো। কিন্তু আমরা দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ নই।
বুধবার অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ১০৫ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে ক্রিকেটে মনোনিবেশ করা খুবই কঠিন। কিন্তু দেশের এ অবস্থা দূরে ঠেলে আমাদের টাইগাররা নৈপুণ্য প্রদর্শন করে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে পুনর্বার অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, কিছু মানুষ তাঁকে ও বিএনপি চেয়ারপার্সনকে এক কাতারে দাঁড় করাতে চায়। কিন্তু কেন এ অবিচার এ প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া মানুষ হত্যা করছেন এবং মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছেন। কিন্তু আমি মানুষের সেবা করছি এবং তাদের জীবনযাত্রার উন্নয়নে সার্বিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।
হরতাল ও অবরোধের নামে সারাদেশে বর্বরতা ও ভয়াবহতার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৯৩ জন মানুষ নিহত ও এক হাজারের অধিক আহত হয়েছেন। অনেকে বিভিন্ন হাসপাতালে দুর্ভোগ ও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তাদের কি অপরাধ? তারা কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তারা সাধারণভাবে জীবন পরিচালনা করতেন। কেন এই নিরপরাধ সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংস হামলা চালানো হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৃষ্টির সেরা জীব হচ্ছে মানুষ। তাহলে বিএনপি-জামায়াত কিভাবে এই নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করছে ও পোড়াচ্ছে। ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। তবে কিভাবে তারা নিরপরাধ মুসলমানদের হত্যা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশে আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের এক অবিস্মরণীয় ঠিকানা। বাঙালি জাতি বিপন্ন বোধ করলেই ছুটে যায় একুশের স্মারক শহীদ মিনারে। তিনি বলেন, শহীদ মিনার আমাদের চেতনার প্রতীক। এ কারণেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিরোধী অপশক্তির হাতে শহীদ মিনার বার বার ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে।
একুশে পদক প্রদান
একুশে পদকপ্রাপ্তরা হলেন ভাষা আন্দোলনে পিয়ারু সরদার (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধে প্রফেসর এম মুজিবুর রহমান দেবদাস, ভাষা ও সাহিত্যে প্রফেসর দ্বিজেন শর্মা ও মুহাম্মদ নুরুল হুদা, শিল্প ও সংস্কৃতিতে আবদুর রহমান বয়াতী (মরণোত্তর), এসএ আবুল হায়াত ও এটিএম শামসুজ্জামান, শিক্ষায় প্রফেসর এমএ মান্নান ও সনত্ কুমার সাহা, গবেষণায় আবুল কালাম মুহাম্মদ জাকারিয়া, সাংবাদিকতায় কামাল লোহানী, গণমাধ্যমে ফরিদুর রেজা সাগর, সমাজসেবায় ঝর্নাধারা চৌধুরী, শ্রীমত সত্যপ্রিয় মহাথেরো ও ড. অরূপ রতন চৌধুরী।
প্রতিটি পদকের সঙ্গে রয়েছে ১ লাখ টাকার একটি চেক, একটি ক্রেস্ট ও সম্মাননা।