তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারাভিযান। ক্ষমতাসীন ও অন্যান্য দল সমর্থিত প্রার্থীরা মঙ্গলবার থেকেই পুরোদমে প্রচারে নেমে পড়েছেন। মতবিনিময় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে। তবে ঢাকার দুই সিটিতে বিএনপি সমর্থিত ও প্রত্যাশী প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে ছিলেন অনুপস্থিত। আইনি মারপ্যাঁচে পড়ে এখন পর্যন্ত ঢাকা উত্তরে মেয়র প্রার্থীই চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। দলটি দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসসহ কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় তার প্রচারে নামেননি। বিএনপির অভিযোগ- থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সক্রিয় নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতংকে এখনও প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারছেন না। আবার যারা জামিন পাচ্ছেন তাদের অনেককে কারা ফটক থেকেই আটক করা হচ্ছে। ঢাকার দুই সিটিতে মাঠে নামতে না পারলেও চট্টগ্রামে পুরোদমে প্রচারে নেমেছে বিএনপি। মঙ্গলবার সারা দিন কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান।
এদিকে প্রথম দিনেই ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লংঘন করে প্রচারের অভিযোগ ওঠেছে।
জাতীয় পার্টি সমর্থিত উত্তরের প্রার্থী বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল সকাল সাড়ে ১০টায় আবদুল্লাহপুর মোল্লা এস্টেটে মা-বাবার কবর জিয়ারত করে আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামেন। পরে তিনি উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করেন। বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন। জাসদ সমর্থিত প্রার্থী নাদের চৌধুরী সন্ধ্যা ৭টায় উত্তরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে প্রচারণা শুরু করেন। উত্তরের মেয়র প্রার্থী জোনায়েদ সাকী সকাল সাড়ে ১০টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করেন। আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের পুত্র ববি হাজ্জাজ আজ দুপুর ১টায় মিরপুর শাহ আলী দরবার শরিফ মাজার থেকে প্রচারণার কার্যক্রম শুরু করবেন। এ সিটির মেয়র প্রার্থী বিকল্পধারার নেতা মাহী বি. চৌধুরী নির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন।
প্রচারণার শুরুতেই আচরণবিধি লংঘন সাঈদ খোকনের : আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারের প্রথম দিনেই আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ উঠেছে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার পর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী প্রবেশমুখে পথসভার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাস্তায় তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। এ সময় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন পথচারীরা। ফ্লাইওভারের দুই পাশে বিপুলসংখ্যক গাড়ি যানজটে আটকা পড়ে। এ সময় সাঈদ খোকনের সঙ্গে ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ ও ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করে লালবাগ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন। লালবাগের অলিগলি পেরিয়ে শহীদ নগর পর্যন্ত গণসংযোগ চালান মিলন। এ সময় মিলন বলেন, নাগরিক সমস্যা সমাধান করাই আমার প্রথম লক্ষ্য। সাধারণ মানুষ আমাকে যে সমর্থন দিচ্ছেন তাতে আমি সন্তুষ্ট।
জানা গেছে, মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালের প্রার্থিতা রিটার্নিং কর্মকর্তা বৈধ ঘোষণা করেন। কিন্তু পরে তার বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ এনে প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করে সোনালী ব্যাংক। সোমবার এ আবেদন খারিজ করে দেয় আপিল কর্তৃপক্ষ।
আচরণবিধি লংঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা -ইসি : সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো প্রার্থী বা সমর্থক আচরণবিধি ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আবারও জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে তিনি আরও বলেন, প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেছেন। আর দু-তিন দিন পর প্রতীকসহ প্রচারণা করতে পারবেন। প্রচারণা চালানোর বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। তবে তা অবশ্যই আইনসঙ্গত হতে হবে। নির্বাচনী আচরণবিধি সঠিকভাবে মানতে হবে। কেউ বিধি ভঙ্গ করলে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইনে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে কিছু প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এটা চলমান থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আইন অনুযায়ী সব ক্ষমতা দেয়া আছে জানিয়ে শাহ নেওয়াজ বলেন, রির্টানিং কর্মকর্তা এসব দেখবেন। তবে আইনি সহায়তাসহ অন্য কোনো সহায়তার দরকার হলে আমরা সহায়তা করব।
মনজুর আলমের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। মঙ্গলবার বিকালে হালিশহর নতুনবাজার এলাকায় নির্বাচনী পথসভা ও গণসংযোগ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। পরে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ চালান। এ সময় তিনি ব্যবসায়ী, দোকানদার, পথচারীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং এম মনজুর আলমের পক্ষে ভোট চান। পথসভায় নোমান বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে আমরা আচরণবিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। কিন্তু সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থী পদে পদে আচরণবিধি লংঘন করে চলেছেন। সরকারি কর্মকর্তা, বাইরের মন্ত্রী-এমপিরা চট্টগ্রামে এসে নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহশ্রমবিষয়ক সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দিন, বিএনপি নেতা কাজী আকবর, নগর যুবদলের সভাপতি কাজী বেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
এদিকে মঙ্গলবার বিকালে একটি কমিউনিটি সেন্টারে দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন। তবে তার মূল প্রচারণা শুরু হওয়ার কথা রাত ১২টা ১ মিনিটে নাগরিক কমিটির নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে। এতে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ইছহাক মিয়া, সদস্যসচিব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। নাগরিক কমিটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত আজ থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন আ জ ম নাছির। সকালে মাকে সালাম করে বাবার কবর জিয়ারত করবেন। সেখান থেকে গিয়ে তিনি হজরত আমানত শাহ (রহ.) মাজার জিয়ারত করবেন। এরপর ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা, পথসভাসহ জোরালো প্রচারণায় নামবেন।