রাজধানীতে তিন ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে গতকাল সোমবার নগরীর অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন কাজের প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ। বৃষ্টিতে কাকভেজা হওয়ার পাশাপাশি রাস্তায় জমে থাকা পানির কারণে দুর্ভোগ সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছায়। কোনো কোনো এলাকায় যানজটের কারণে রাস্তার উভয় পাশে অসংখ্য সিএনজি অটোরিক্সা, প্রাইভেট কার ও যাত্রীবাহী বাস ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অকেজো হয়ে পড়ে অনেক গাড়ি। এতে যানজট রূপ নেয় জলজটে।
আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় রাজধানীতে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সকাল ছয়টা থেকে ১২টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি আরো তিন দিন থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
গতকাল সকাল ছয়টার পর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর কখনো মুষলধারে আবার কখনো গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত থাকে। গড়ে তিন ঘণ্টার মতো টানা বৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে নগরীর অলিগলি ও অনেক সড়কে কাদাপানি জমে যায়। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হয় স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষকে। বৃষ্টির কারণে রাজধানীর মতিঝিল, পুরানা পল্টন, নয়াপল্টন, গুলিস্তান, নিউমার্কেট এলাকায় হাঁটু পানি জমে যায়। এ কারণে গাড়িগুলো চলতে পারছিল না স্বাভাবিক গতিতে। আর রাস্তার বাম পাশের কোথাও ভাঙা বা গর্তের ভয়ে গাড়িগুলো শুধু ডানপাশ দিয়ে চলতে বাধ্য হয়। একারণে যানজট আরো তীব্র হয়। সকাল থেকে গুলিস্তান, মতিঝিলের দিকে যাওয়া গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতি হারালে যানজট ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর রোড ও ভিআইপি সড়কের কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে। ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মানিক মিয়া এভিনিউ, ফার্মগেট, কাওরান বাজারসহ ঢাকার উত্তর অংশে বিমানবন্দর সড়ক, বনানী, গুলশান, মহাখালী এলাকাতেও তীব্র জলাবদ্ধতায় দুঃসহ যানজট তৈরি হয়।
এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, আজিমপুর, চানখাঁরপুলের চারপাশের সড়ক ও আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাজধানীর বাড্ডা, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা লিংক রোডসহ আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

 

অনেককে পায়ের স্যান্ডেল-জুতো খুলে, প্যান্ট ভাঁজ করে কোনো রকমভাবে হাঁটতে দেখা যায়। আবার পরিবহনগুলো যখন পানিতে ঢেউ তুলে চলাচল করছিল তখন পায়ে হাঁটা যাত্রীরা ভিজে একাকার হয়ে যায়। এদিকে বৃষ্টিতে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কের পাশের বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ থাকতে দেখা যায়। কিছু দোকান খোলা থাকলেও দোকানগুলোর ভেতরে পানি উঠে যায়।
আরেক নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, জলাধার রক্ষা, ডিসিসি ও ওয়াসার ড্রেন লাইনগুলো পরিষ্কারসহ বৃষ্টির পানি ধরে রেখে ব্যবহার করা গেলে ঢাকার জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে আসবে। বিশেষ করে প্রত্যেক বাসা-বাড়িতে যদি বৃষ্টির পানি ধরে রাখার আধার নির্মাণ করা যায় তাহলে রাস্তায় পানি কম জমবে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি পাতালে চলে যাওয়ার সুযোগ দিলেও কম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। কংক্রিটের শহরের বৃষ্টির পানি পাতালে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে না। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন স্থানে পাইপ গেড়ে পানি পাতালে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারলে সুফল পাওয়া যাবে।