২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর বর্ষবরণের রাতে প্রায় ৯০ থেকে ১০৬ জন মহিলাকে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে জার্মান শহর কলোজেনে। দুই নারীকে ধর্ষণ করা হয় বলেও অভিযোগ। সঙ্গে ছিল লুটপাটেরও অভিযোগ। আরও অভিযোগ ছিল আরব কিংবা উত্তর আফ্রিকার বাসিন্দা ও শরণার্থীরা জার্মান নারীদের ওপর হামলে পড়ছে। বর্ষবরণের রাতে শহরের রেল স্টেশনে জড়ো হয়ে আলাদা আলাদা দলে ভাগ হয়ে যায় তারা। এরপর নিশানা করে নারীদের নিগ্রহ করে। এ বিষয়টি বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমও ফলাও করে প্রচার করে। এতে জার্মানির অভিবাসীদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠে। ফলে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নানা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় সরকারকে।
একই ধরনের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ৬ ফেব্রুয়ারি। ফ্রাংকফুর্টে নববর্ষ পালনের সময় আরব বংশোদ্ভুত বহু মানুষ (যাদের চেহারা রিফুজিদের মতো) এক নারীকে রাস্তায় যৌন নির্যাতন করে বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদপত্রটি। এতে নতুন করে শরণার্থীবিরোধী জনমত গড়ে ওঠে। এ ঘটনায় পুলিশও তদন্ত শুরু করে।
তবে তদন্তের পর জার্মান পুলিশ জানিয়েছে তারা এ বিষয়ে প্রধান পত্রিকাটির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সপক্ষে কোনো প্রমাণ পায়নি। এরপর বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বলে উঠে আসে তদন্তে।
তবে সংবাদপত্রটির এ মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় তারা ওয়েবসাইট থেকে তা সরিয়ে ফেলে। এরপর ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশের জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে।
শুধু একটি ঘটনাই নয়, জার্মানিতে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে বলে জানা গেছে অনুসন্ধানে। গত কয়েক বছর ধরেই চলছে এ ধরনের মিথ্যা সংবাদ।
বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী নির্যাতনকারীদের বিষয়ে তুলে ধরা হয় ভুল তথ্য। বলা হয়, সাধারণত ভিড়ের মধ্যে মিশে থাকে এই অভিযুক্তরা। সুযোগ বুঝে পরিকল্পনা করে কোনও যুবতি, তরুণীদের উপর হামলা করে তারা। ভিড়ের মধ্যে বৃত্ত তৈরি করে হামলা চালানো হয়। মোট তিনটি বৃত্ত করা হয়। এরমধ্যে শেষের বৃত্তে মিশে থাকা দুষ্কৃতকারীদের কাজ হল বাইরের লোকজনকে আটকে রাখা। মাঝের বৃত্ত ভিড়ের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। আর প্রথম বৃত্তের সদস্যরা খেলা করতে থাকে নারী শরীর নিয়ে। ভিড়ের মধ্যে থেকেই ১-২ জন আক্রান্তকে বাঁচানোর অভিনয় করতে থাকেন। এ ধরনের প্রচারণা ছাড়াও রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য প্রচার।
একইভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে শরণার্থীবিরোধী প্রচারণা। এছাড়া সামান্য সংবাদকে বড় করে দেখানো কিংবা গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারেও কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।
অনলাইনে ও সংবাদপত্রে এসব মিথ্যা সংবাদের কারণে বহু মানুষই শরণার্থী ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট