আট বছরে ৬০ হাজারের বেশি জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে ঢুকেছে আর তারাই আওয়ামী লীগের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা সংঘটিত বেশ কিছু বিতর্কিত ঘটনায় দলকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। সরকার ও দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতেই তারা আওয়ামী লীগে এসেছে—এমনটিই মনে করছেন দলের হাইকমান্ড। যে কারণে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগে কারা অনুপ্রবেশ করছে, কার মাধ্যমে দলে ঢুকেছে, তাদের একটা তালিকা তৈরি করে জমা দিন। গত ২১ জুলাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় শেখ হাসিনা আরো বলেন, কিছু লোক আওয়ামী লীগ হয়ে দলে ঢুকে, তারপর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে দল ও সরকারকে বিব্রত করে। এদের বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৮ বছরে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠাকিভাবে সারাদেশে জামায়াত-শিবির-বিএনপির ৬০ হাজারের বেশি তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থক আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। এক্ষেত্রে কেউ কেউ অতীতের পরিচয় গোপন করছেন, আবার অনেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ম্যানেজ করে বা অর্থের বিনিময়ে দলে ভিড়েছেন। শুধু তাই নয়, তৃণমূল আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নেতৃত্বও দিচ্ছেন জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা এসব নেতাকর্মী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুলিশে নিয়োগসহ স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরিতে স্থানীয় এমপিদের ছত্রছায়ায় অনুপ্রবেশকারীরাই মুখ্য ভূমিকা রাখছেন।
সূত্র জানায়, প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগদান করছে। বিভিন্ন জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, সংসদ সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে অন্য দল থেকে নেতাকর্মী ভাগিয়ে আনছেন। এতে দল শক্তিশালী তো হবেই না, উল্টো সংগঠনে বিশৃঙ্খলা বাড়বে।
আরও জানা গেছে, দল শক্তিশালী করতে ২০১১ সালে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করে আওয়ামী লীগ। সারা দেশে দুই টাকা মূল্যের সদস্য ফরম পাঠানো হয়। কিন্তু পরে তা আর বেশি দূর এগোয়নি। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, অভিযান শুরুর পর তা বাস্তবায়নে আর আগ্রহ দেখাননি দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। সম্প্রতি আবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানান, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা যাতে আওয়ামী লীগে যোগদান করতে না পারে সেজন্য দলের হাইকমান্ডে থেকে কঠোর নির্দেশনা তৃণমূলে পাঠানো হয়েছে। এখন আর জামায়াত-বিএনপির চিহ্নিত নেতারা আওয়ামী লীগে যোগ দান করতে পারছে না। আর যারা অনুপ্রবেশ করেছে তাদের তালিকা হচ্ছে।