জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’কে অর্থ জোগান দেয়ার অভিযোগে তিন আইনজীবীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। মঙ্গলবার রাতে ঢাকার ধানমণ্ডির বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি ও হুইপ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, অ্যাডভোকেট হাসানুজ্জামান লিটন এবং অ্যাডভোকেট মাহফুজ চৌধুরী বাপন। এদের মধ্যে শাকিলা ফারজানা সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য। গ্রেফতারকৃত তিন আইনজীবীকে বাঁশখালী থানায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী মামলা নং-১৬ গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বুধবার বিকালে গ্রেফতারকৃত তিন আইনজীবীকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বাঁশখালী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন জানায় র্যাব। উভয় পক্ষের বক্তব্য শেষে বাঁশখালী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজ্জাদ হোসাইন সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড মঞ্জুর শেষে কড়া পাহারায় তাদের পতেঙ্গা র্যাব-৭ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
র্যাব-৭ এর এএসপি মো. সোহেল মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেডের’ উদ্দেশ্য ছিল দেশের অভ্যন্তরে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা। এছাড়া সদস্য সংগ্রহ ও মানুষের সহানুভূতি অর্জনের লক্ষ্যে সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনটি মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষে প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে। আর এ কাজে আর্থিক সহায়তা করে আসছে গ্রেফতার তিন আইনজীবীসহ এক বিদেশী নাগরিক। শহীদ হামজা ব্রিগেডে কাজের জন্য সংগ্রহ করে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর মধ্যে গ্রেফতার তিন আইনজীবী দিয়েছেন ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। এ টাকার মধ্যে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা দিয়েছেন ৫২ লাখ টাকা (দুই দফায় ২৫ লাখ ও ২৭ লাখ করে), অ্যাডভোকেট মো. হাসানুজ্জামান লিটন দিয়েছেন ৩১ লাখ টাকা এবং অ্যাডভোকেট মাহফুজ চৌধুরী বাপন দিয়েছেন ২৫ লাখ টাকা। এছাড়া দুবাইয়ের নাগরিক আল্লামা লিবদি নামের একজন বিদেশী নাগরিকও হামজা ব্রিগেডকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে বলে র্যাব তথ্য পেয়েছে।
জানা গেছে, ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলার হাটহাজারী উপজেলার ‘আল মাদরাসাতুল আবু বকর’ নামে একটি মাদ্রাসায় অভিযান পরিচালনা করে শহীদ হামজা ব্রিগেডের একটি তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান পায় র্যাব-৭। এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীতে সন্ধান পাওয়া যায় ওই সংগঠনের সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ২৮ ফেব্র“য়ারি চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর এলাকায় বিস্ফোরক মজুদের আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। র্যাব-৭ এ পর্যন্ত ৮টি অভিযান পরিচালনা করে ২৯ জনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া শহীদ হামজা ব্রিগেডের হোয়াইট, ব্লু ও গ্রিন নামে তিনটি সামরিক শাখা রয়েছে। এ সংগঠনের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী মোজাহার হোসেন মিঞা এবং বিস্ফোরক সরবরাহকারী ও বোমা বিশেষজ্ঞ আনোয়ারকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাব কর্মকর্তারা আরও জানান, এ সংগঠনের প্রত্যেক সদস্য ওয়ানম্যান ওয়ান আর্মি হিসেবে প্রশিক্ষিত। ২০১৩ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম নগরীর ফয়’স লেকে একটি রেস্টুরেন্টে সভা করে এই জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
র্যাব-৭ এর পরিচালক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেফতার তিন আইনজীবীর বিরুদ্ধে জঙ্গি সংগঠন হামজা ব্রিগেডকে অর্থ সহায়তা করার তথ্য-প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। দীর্ঘ অনুসন্ধান ও তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পরই তারা এই তিন অর্থ জোগানদাতা আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই আইনজীবী কী উদ্দেশ্যে, কাদের নির্দেশে এবং কী কারণে এই জঙ্গি সংগঠনটিতে অর্থ সহায়তা দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখতেই রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এই অর্থ জোগানদাতাদের পেছনে কোনো বিদেশী জঙ্গি গোষ্ঠী বা সংগঠন বা ব্যক্তি জড়িত কিনা সে বিষয়টিও জানার চেষ্টা করা হবে। বুধবার বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন সমিতির নিয়মিত সদস্য ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছেন।