কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। তবে প্রতিপক্ষ বিএনপি বলেছে, এই নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে প্রভাব বিস্তার ছাড়াও কারচুপি ও জাল ভোট প্রদানের অভিযোগ এনেছে তারা। বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘সরকারি দল ভোট ডাকাতির নির্বাচন করেছে।’ তিনি শতাধিক ভোটকেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে নির্বাচন কমিশন খুলনায় শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দাবি করেছে।
মোট ২৮৯টির মধ্যে ২৮৬টি কেন্দ্রের ঘোষিত ফলে নৌকা প্রতীকে ভোট পড়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ৯০২টি আর ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পড়েছে এক লাখ আট হাজার ৯৫৬টি। এর ফলে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। অনিয়মের অভিযোগে বাকি তিনটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচনে মোট পাঁচজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অন্য তিনজন হলেন কাস্তে প্রতীক নিয়ে সিপিবির মিজানুর রহমান বাবু, লাঙল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির শফিকুর রহমান মুশফিক ও হাতপাখা নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মুজাম্মিল হক।
খুলনা সিটি করপোরেশনে (কেসিসি) গতকাল মঙ্গলবারের এই নির্বাচনে তালুকদার খালেক হারানো মসনদ পুনরুদ্ধার করলেন। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি কেসিসির মেয়র ছিলেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির কাছে প্রায় ৬১ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি। আওয়ামী লীগের এবারের জয়ের পেছনে নগরীর ব্যাপক উন্নয়নকাজ মূল ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন অনেকে। নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু তাঁর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের ঘটনা সামনে এনে ভোটারদের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করেন। ভোটারদের ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, বিএনপি প্রার্থী জয়ী হলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত হবে। তালুকদার খালেকের প্রতিশ্রুতি ছিল, তিনি নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত উন্নয়নকাজ শেষ করবেন।
ভোটগণনার পর্যায়ে গত রাত সাড়ে ৮টার দিকে তালুকদার খালেকের জয়ের আভাস পেয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় নেমে পটকা ফুটিয়ে উল্লাস করতে থাকে।
ভোটগ্রহণ স্থগিত তিন কেন্দ্রে : নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এগুলো হলো ইকবালনগর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রূপসা বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়। এ ছাড়া ফাতিমা স্কুল কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করার পর আবার ভোট নেওয়া হয়।
সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। কেন্দ্রগুলোতে সকাল থেকেই ভোটাররা জড়ো হতে থাকেন। বেশ উত্সবের মেজাজেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে ১০টার দিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করেন, অনন্ত ৪০টি কেন্দ্র থেকে তাঁর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এজেন্টদের মারধর করা হয়েছে। তিনি জানান, ২২, ২৫, ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের রূপসা স্কুল কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট সেলিম কাজীকে মারধর করা হয়েছে। এ ছাড়া নগরীর বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আব্দুল মালেক ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সামনের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে।
কেসিসি নির্বাচনে সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৩৯ জন এবং ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। নির্বাচনে মোট ভোটার চার লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ ও নারী দুই লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন। ভোটকক্ষ এক হাজার ১৭৮টি। ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষে দায়িত্ব পালন করেন চার হাজার ৯৭২ জন কর্মকর্তা।