নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপে সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের বেশির ভাগই আগামী নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগের সুপারিশ করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা ‘না’ ভোটের বিধান পুনর্বহাল করতে বলেছেন। এ ছাড়া ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, হলফনামায় দেওয়া তথ্য যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি, প্রশাসন ঢেলে সাজানো, মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ, প্রবাসীদের ভোটার করার সুপারিশও এসেছে সংলাপে। প্রস্তাবও এসেছে নির্বাচনের সময় সংসদ ভেঙে দেওয়ার। তবে দুজন সাবেক আমলা সেনাবাহিনী মোতায়েন না করা বা করলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েনের পক্ষে বলেন। ‘না’ ভোটের বিপক্ষে বলেছেন একজন।
সংলাপ শেষে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তাঁরা জানান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইসি তাঁদের কোনো বক্তব্য খণ্ডন করার চেষ্টা করেনি। শুধু শুনেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও প্রেস ব্রিফিংয়ে সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এসব প্রস্তাব পেয়েছেন বলে জানান।
আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত এই সংলাপে মোট ৫৯ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও উপস্থিত ছিলেন ৩৩ জন। যাঁরা আসতে পারেননি তাঁদের কেউ কেউ বিদেশে রয়েছেন; কয়েকজন অসুস্থ এবং কেউ কেউ নিজেদের কাজে ব্যস্ত বলে জানিয়েছিলেন।
সংলাপে অন্যান্যের মধ্যে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তারেক শামসুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন, অধ্যাপক ড. তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রোকেয়া এ রহমান, ড. অজয় রায়, অধ্যাপক এম এম আকাশ, নিজেরা করির খুশি কবির, সঞ্জীব দ্রং, আবুল হোসেন চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গোলাম হোসেন, মুহাম্মদ আবুল কাশেম, জহুরুল আলম, সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মণ্ডল, মুভ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সাইফুল হক, সেড’র নির্বাহী পরিচালক ফিলিপ গায়েন, ব্রতি’র সিইও শারমিন মুরশীদ এবং প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান।
সংলাপ থেকে বের হয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত, নির্বাচনীব্যবস্থা ঢেলে সাজানো, নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার করার বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, ইসিকে মানুষের আস্থা অর্জন ও স্বাধীন ভূমিকা মানুষের কাছে দৃশ্যমান করতে হবে। নির্বাচনী আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে অনেক দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। কিছু বিষয়ে আইনের দুর্বলতা আছে। সেগুলো সংস্কার করে ঘাটতিগুলো পূরণ করতে হবে।