মিয়ানমারে আগামী বছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে সীমান্তে ঝামেলা সৃষ্টি করে সে দেশের জনগণকে সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করানোর একটা অপচেষ্টা থাকতে পারে। সে কারণেই হয়তো মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশ ও অন্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে এ ধরনের বিরূপ আচরণ করা হচ্ছে। আগামী বছরের নির্বাচনের আগে মিয়ানমার আবারও এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান।
আশফাকুর রহমান বলেন, মিয়ানমার দীর্ঘ সময় ধরেই সামরিক শাসনের অধীনে রয়েছে। আর সামরিক শাসকদের চিন্তাভাবনা স্বাভাবিকের তুলনায় সর্বদাই ভিন্ন। এ ছাড়া মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বেশ কিছু সমস্যা আছে। সেগুলোরই বহিঃপ্রকাশ বাংলাদেশের সঙ্গে খারাপ আচরণ। যদিও বিশ্ব সম্প্রদায় মিয়ানমারকে সুপথে আনতে চাইছে। ঝামেলাপূর্ণ পরিবেশ থেকে মিয়ানমারের জনগণকে উদ্ধারের জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব সেখানে সফরে যাচ্ছেন। কিন্তু এর পরও মিয়ানমার তার অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারেনি। এখন কথা চলছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরতে আগামী বছর সেখানে একটি নির্বাচন হবে। কিন্তু সামরিক জান্তারা চাইছেন, সীমান্তে কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহের পরিস্থিতি তৈরি করে সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দিয়ে সামরিক শাসনকেই বহাল রাখতে। তিনি বলেন, এমন তো কোনো কিছু হয়নি যে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে। তাই আমার ধারণা, মিয়ানমারের সামরিক শাসকরা নিজেদের কোনো স্বার্থে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্তে প্রায়ই ঝামেলা তৈরি করছে। সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুকে অনেক বড় সমস্যা হিসেবে দেখাচ্ছে মিয়ানমার। কিন্তু রোহিঙ্গারা সংখ্যায় খুব বেশি নয়। মিয়ানমারের মতো বড় আয়তনের একটি দেশের জন্য মাত্র কয়েক লাখ রোহিঙ্গা কোনো সমস্যাই হওয়ার কথা নয়। আবার রোহিঙ্গারা তো আর জোর করে মিয়ানমারে থাকতে চাইছে না। তারা তো সেখানকারই বাসিন্দা। কিন্তু অত্যন্ত বাজেভাবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি বলে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ইতিহাস তুলে ধরে আশফাকুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গারা ইয়েমেন থেকে সরাসরি মিয়ানমারেই বসবাস শুরু করে। নিছক বাংলাদেশিদের মতো দেখতে বলে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠানো কোনো যুক্তিযুক্ত কথা হতে পারে। তা-ই যদি হতো, তাহলে আমেরিকান কালোদের আফ্রিকায় পাঠিয়ে দেওয়া হতো।
সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান বলেন, যেহেতু প্রতিবেশী পরিবর্তনের সুযোগ নেই, তাই বাংলাদেশকেও মিয়ানমারের সমস্যা উপলব্ধি করতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক, বিনিয়োগসহ নানা ধরনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে হবে। তাহলেই তারা বুঝতে পারবে বাংলাদেশ একটি সুপ্রতিবেশী রাষ্ট্র। এ ছাড়া বাংলাদেশকে তার অন্যান্য প্রতিবেশী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও জোরালোভাবে বোঝাতে হবে যে, মিয়ানমার বিরূপ আচরণ করছে। এটি কোনো প্রতিবেশীসুলভ আচরণ নয়। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়াসহ অন্যান্য ইস্যু সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাধ্য করার পলিসি গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে তা কাজে লাগাতে হবে।