বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, শিক্ষা মানুষকে গণতন্ত্রের প্রতি, ভিন্নমতের প্রতি, ভিন্নমত প্রকাশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিক্ষা দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার শিক্ষার এই মৌলিক লক্ষ্যকে পদদলিত করছে।
শনিবার রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে বিএনপি আয়োজিত ‘বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও আমাদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক দিনব্যাপী সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দুটি সেশনে সেমিনার হয়। সকাল ১০টায় প্রথম সেশনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ। এ সেশনে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও তিনি অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি। দ্বিতীয় সেশনে সভাপতি হিসেবে ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান অতিথি ছিলেন খালেদা জিয়া।
বেগম জিয়া বলেন, শিক্ষা মানুষকে গণতন্ত্রের প্রতি, ভিন্নমতের প্রতি, ভিন্নমত প্রকাশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিক্ষা দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার শিক্ষার এই মৌলিক লক্ষ্যকে পদদলিত করছে। তারা শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার দাবি করলেও দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে। বিরোধীমতের লোকজনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করছে। মোদ্দাকথায়, শিক্ষার সকল উদ্দেশ্য আজ ভুলুন্ঠিত।
তিনি বলেন, সুশাসন, আইনের শাসন আজ নেই বললেই চলে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ক্ষমতাসীন সরকার সকল বিরোধী মতকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবো, প্রতিষ্ঠা করবো মানুষের অধিকার। আমরা জানি এ লড়াই কঠিন লড়াই। কিন্তু যে জাতি লড়াই করে স্বাধীন হয়েছে তাদের কাছে এ লড়াই কোনো কঠিন লড়াই নয়।
খালেদা জিয়া বলেন, জন ইচ্ছার প্রতিফলনে আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি শিক্ষাব্যবস্থাকে কেমন করে জনকল্যাণমুখী করবে তা ইতিমধ্যে ভিশন ২০৩০ এ জানানো হয়েছে। ক্ষমতায় গেলে প্রথম পাঁচ বছরেই আমরা এসব বাস্তবায়িত করতে পারব না। শিক্ষাখাতে জিডিপির শতকরা পাঁচভাগ ব্যয় করে দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ ও অন্যান্য শিক্ষা সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়া হবে। আমরা এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলব যাতে শিক্ষা শুধু ডিগ্রি অর্জনের হাতিয়ার হবে না, হবে জীবনে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার হাতিয়ার। সর্বপর্যায়ে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ লাভের ক্ষেত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জেন্ডার ও অর্থনৈতিক বাধাসমূহ দূর করা হবে।
তিনি বলেন, আত্মতুষ্টির কারণে পাসের হার বাড়িয়ে আমাদের শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি হয়েছে। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে না পারলে আগামী দিনে আমাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে, আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ব। বর্তমানে বাংলাদেশ একাধিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। প্রত্যেকটি ব্যবস্থার লক্ষ্য ভিন্ন ভিন্ন। এই ভিন্নতার সঙ্গে সমাজে বিরাজমান যে শ্রেণি ও অর্থনৈতিক বৈষম্য আছে তা সম্পর্কিত। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি, সমাজ যেখানে মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য নিজেই অর্থের সংস্থান করে, সমাজের সুবিধাভোগীরা সেখানে ভিন্ন ধরনের শিক্ষার জন্য অর্থ ব্যয় করে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রচলিত সবধরনের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করতে হবে।