ব্যাঙ্গের ছাতা বা মাশরুম আমরা সবাই চিনি। এর মাঝে কিছু মাশরুম রয়েছে যেগুলো খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। আবার কিছু মাশরুম আছে যেগুলো ভয়াবহ রকমের বিষাক্ত। তাই সব ধরণের মাশরুমই খাওয়া যায় এ ধারণা ভুল। আবার এক রকমের মাশরুম আছে যাদেরকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মাদকদ্রব্য। আজকের লেখা Psilocybin mushroomকে নিয়ে। এটি ম্যাজিক মাশরুম নামে সাধারণভাবে পরিচিত।
এই মাশরুমে থাকে সাইকোএক্টিভ ইন্ডোল এলকালয়েড নামের রাসায়নিক পদার্থ। তাই কেউ যদি এই মাশরুম খেয়ে ফেলে তখন এই রাসায়নিক পদার্থ তার মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। এর ফলে মানুষের আচরণ, মনোভাব, চিন্তাকরা ও মনে রাখার ক্ষমতা পরিবর্তিত হয়ে যেতে থাকে। অনেক সময় এটি মানুষের চেতনাশক্তিকে সাময়িকভাবে লোপ করে দিতে পারে।
সুপ্রাচীনকাল থেকে এই মাশরুমের বিচিত্র ব্যবহারে কথা আমরা জানতে পারি। উত্তর আফ্রিকায় Tassili n’Ajjer এলাকাতে প্রাপ্ত বেশ কিছু প্রাচীন পাথরের উপর খোদাই করা চিত্রে এই মাশরুমের ছবি দেখা যায়। গ্রন্থকার জিওর্জিও স্যামোরিনির মতে, খুব সম্ভবত সেই যুগে Psilocybin মাশরুমকে মানুষ ব্যবহার করতো সাময়িক চেতনানাশক হিসেবে। তারা এই মাশরুম সেবন করে মৃত আত্মাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতো।
পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী মাদক – মাশরুম
কেউ এই মাশরুম খেয়ে ফেললে সে সাময়িকভাবে অচেতন হয়ে পড়ে। এর আগে তার মাঝে নানা ধরণের আচরণগত পরিবর্তন দেখা যায়। Psilocybin এর এই চেতনাশক্তি হ্রাসকারী প্রভাব তিন থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এটি নির্ভর করে কি পরিমাণ মাশরুম খাওয়া হলো তার উপর। মাশরুম খেয়ে ফেলার আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মাঝে মানুষের দর্শন ও শ্রবণ শক্তিকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চলে আসে। মানুষ চোখে বিচিত্র রঙ দেখতে থাকে যেগুলোর বাস্তব অস্তিত্ব নেই। আবার বাস্তব জগতের অনেক রঙ তাদের কাছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক উজ্জ্বল মনে হয়।
অনেকে আবার এই মাশরুম থেকে পাওয়া psilocybin কে কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক উভয়ভাবে উৎপাদন করে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করার কথা ভাবছেন। যেমন obsessive-compulsive disorders । লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ ও জন হপকিন্স স্কুল অব মেডিসিন পরিচালিত এক গবেষণাতে দেখা যেয়, নিয়মিত Psilocybin mushroom সেবন করলে তা বিষণ্ণতা-প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে।
তবুও Psilocybin mushroom এর মাঝে থাকা psilocybin ও psilocin দুটিই রাসায়নিক পদার্থই জাতিসংঘে ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত Convention on Psychotropic Substances এর ‘শিডিউল-১ ড্রাগ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। এই তালিকার ড্রাগ গুলোকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর ও চিকিৎসাকাজে ব্যবহারে অনুপযোগী হিসেবে ধরা হয়। অনেক দেশেই এই মাশরুম কেনা-বেচা বা বহন করা নিষিদ্ধ। আমেরিকাতে Psychotropic Substances Act, ইংল্যান্ডে Misuse of Drugs Act 1971 and Drugs Act 2005, এবং কানাডাতে Controlled Drugs and Substances Act এর মাধ্যমে এই মাশরুমের ব্যবহার হয় নিষিদ্ধ, না হয় নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। নেদারল্যান্ড ডিসেম্বর ১, ২০০৮ থেকে তাদের দেশে Psilocybin mushroom এর উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
তবে অনেক দেশে এটি এখনো নিষিদ্ধ নয়। যেমন অস্ট্রিয়াতে এটিকে মাদক বলে গণ্য করা হয় না।