ফের ফুটবলভক্তদের রাতজাগা শুরু। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর ইউরোপিয়ান লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের খেলা শেষ হতে না হতেই আবার শুরু হচ্ছে ফুটবলের লড়াই। লাতিন সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই কোপা আমেরিকা কাপে মেসি, নেইমার, সানচেজরা একে অন্যের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে পাঁচটায় স্বাগতিক চিলি ও ইকুয়েডরের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে দক্ষিণ আমেরিকান শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের।
ফুটবলের সবচেয়ে পুরনো আসর কোপা আমেরিকা কাপ। ১৯৩০ সাল থেকে বিশ্বকাপ ফুটবলের যাত্রা শুরু হলেও কোপা আমেরিকা তারও ১৪ বছর আগে ১৯১৬ সালে শুরু হয়। দক্ষিণ আমেরিকান ১০টি দেশের সঙ্গে দুই অতিথি দল জ্যামাইকা ও মেক্সিকো চিলি আসরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
১২টি দলকে তিন গ্রুপে বিভক্ত করা হয়েছে। তিন গ্রুপে সেরা দুই দল করে ৬টি দল সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হবে। তিন গ্রুপের বাকি ছয়টি দল থেকে সেরা দুটি দলও কোয়ার্টারে উন্নীত হবে।
কোপা আমেরিকার ৪৪তম আসরে সবার দৃষ্টি যেমন থাকবে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের দিকে, ঠিক তেমনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন লিওনেল মেসি ও নেইমার জুনিয়র। এই দুই আর্জেন্টাইন ও ব্রাজিলিয়ান তারকার পায়ের দিকেই তাকিয়ে থাকবেন গোটা ফুটবলবিশ্বের কোটি কোটি সমর্থক।
স্বাগতিক চিলি কোপা আমেরিকার দুঃখ ঘোচার লক্ষ্য নিয়ে এবারের আসর শুরু করতে যাচ্ছে। আগের ৪৩ বারের আসরে একবারও শিরোপা জয় করতে পারেনি তারা। অ্যালেক্সিস সানচেজ, ক্লদিও ব্রাভো ও আর্তুরো ভিদালদের হাতে ৯৯ বছরের আক্ষেপ ঘোচানোর দায়িত্ব। নিজেদের মাঠে তারা কী পারবেন দলকে দক্ষিণ আমেরিকান শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট এনে দিতে?
চিলির এই দলটিকে সর্বকালের সেরা উল্লেখ করে ভিদাল বলেন, ‘এটা চিলির ইতিহাসের সেরা প্রজন্মের দল। আমরা অবশ্যই এবার শিরোপা জিতব।’
তবে স্বাগতিক চিলিকে ছাপিয়ে আগেরবারের মতো এবারও নিশ্চিতভাবে ফেবারিট হয়ে শুরু করতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। লিওনেল মেসি, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, সার্জিও আগুয়েরো, কার্লোস তেভেজ, গঞ্জালো হিগুয়াইন, হাভিয়ের মাসচেরানোর মতো বিশ্বমানের তারকাদের উপস্থিতি জেরার্ডো মার্টিনোর দল নিজেদের ফেবারিট দাবি করতেই পারে। মেসি তো আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, কোপা জিতে বিশ্বকাপের ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দিতে চান।
ফুটবলভক্তরা নিশ্চিতভাবে উরুগুয়ের বার্সেলোনা তারকা লুইস সুয়ারেজকে মিস করবেন। বিশ্বকাপের কামড়কাণ্ডের জের ধরে আন্তর্জাতিক ম্যাচর থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাকে। যেই কারণে কোপা আমেরিকায় খেলা হচ্ছে না্ তার।
অন্যদিকে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কার্লোস দুঙ্গার নেতৃত্বাধীন ব্রাজিল। বিশ্বকাপ ট্রাজেডির পর টানা দশটি ম্যাচ জিতেছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নেইমার, ডেভিড লুইস, রবিনহো, দানি আলভেজদের উপস্থিতিতে সেলেকাওরা শিরোপার দাবি করতেই পারে।
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকেও রাখতে হবে হিসেবের মধ্যে। গতবার আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে টপকে কোপার শিরোপা জেতা উরুগুয়ে প্রায় ১০০ বছরের প্রতিযোগিতাটির সবচেয়ে সফল দল। সর্বোচ্চ ১৫ বার শিরোপা জিতেছে তারা। মেসির দেশ জিতেছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ বার।
১৯৯৩ সালের পর কোপা আমেরিকার শিরোপা জয় করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ফলে এবার তারা মরিয়া হয়েই মাঠে নামবে। আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের মতো কোপা আমেরিকা কাপে ব্রাজিলের ইতিহাস ততোটা সমৃদ্ধ না হলেও শেষ ছয়বারের আসরে তারা চারবার শিরোপা জিতেছে। ফলে এবারও তারা শিরোপার অন্যতম দাবিদার হয়েই মাঠে নামবে।