রোহিঙ্গাদের ঢলে কক্সবাজারের ওপর ব্যাপক চাপ পড়েছে। একসঙ্গে এতো মানুষের আগমনে স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ক্যাম্পের বাইরেও রোহিঙ্গারা কক্সবাজার শহরসহ টেকনাফ ও উখিয়ায় স্থানীয়দের বাড়িঘর ও আঙ্গিনায় বসতি গড়ে তুলেছে। রোহিঙ্গাদের কারণে এবছর পর্যটন নগরীতে পর্যটন ব্যবসা জমবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। রোহিঙ্গারা আশ্রয় ও জ্বালানির সংস্থান করতে গিয়ে নির্বিচারে পাহাড় ও বনভূমি সাবাড় করেছে। এতে দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এলাকাটির রূপলাবণ্যে প্রভাব পড়েছে।
ইতিমধ্যে প্রায় দেড়শ’ একর জমির ফসল, ধানক্ষেত ও চিংড়ি ঘের নষ্ট হয়ে গেছে। মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় রোহিঙ্গাদের পায়ের চাপে শীতের সবজি ও আমন ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ফসল হারিয়ে পথে বসার উপক্রম। ফলন ঘাটতির কারণে শীতে শাকসবজির দাম আরো বেড়ে যাবে বলে আশংকা করছে কৃষি বিভাগ।
প্রায় ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্প, কক্সবাজার শহর, স্থানীয়দের বাড়ির আঙ্গিনাসহ বনজঙ্গলে ঝুঁপড়ি বেেঁধ বসবাস করছে। স্থানীয়দের নিত্যচাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জোগান দিতে গিয়ে হাটবাজারগুলোর ওপর প্রভাব পড়ছে। এতে নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ব্যবাসায়ীরাও বিপুল চাহিদার অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উখিয়ার কয়েকটি হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৭০/৮০ টাকার নিচে কোন তরকারি নেই। সাগরের মাছে বাজার ভরে গেলেও দাম কমছে না। বিগত দিনের তুলনায় বর্তমানে দ্বিগুণ দাম মাছের।
সউখিয়ার বালুখালী ২ নম্বর ক্যাম্পের বালুখালীরছড়া এলাকার কলেজছাত্র আজিজুর রহমান জানান, বালুখালীরছড়া এলাকায় তার পাঁচ একর জমি আছে। বাড়ির পাশেও চাষযোগ্য জমির কমতি ছিল না। বাড়ির পাশের বিভিন্ন স্থানে হঠাত্ আশ্রয় নেয় লাখ লাখ রোহিঙ্গা। এ কারণে হাতছাড়া হয়েছে তার জমি।
কক্সবাজার কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ ক ম শাহরিয়ার জানিয়েছেন, কক্সবাজারের উপজেলাগুলোতে উত্পাদিত সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায়ও পাঠানো যেতো। কিন্তু বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা যুক্ত হওয়ায় কৃষিতে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এদিকে রোহিঙ্গারা পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্যের আশায় দলবেঁধে ঘিরে ধরছে। এতে বিনোদনের উদ্দেশ্যে আসা মানুষজন বিরক্তবোধ করছে। মূলত সেপ্টেম্বর—অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ মানুষ প্রতিবছর কক্সবাজার ভ্রমণে আসে। এবার এতো পর্যটক আসবে কি না এমন শংকায় ব্যবসায়ীরা।