মৃত পথযাত্রি রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে একটু ‘ মানবতা’ দেখানোর জন্য দেশে-বিদেশে সর্বত্র একটা কাতর আহাজারি চলছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ কাতরতা ক্রমান্বয়ে তীব্র হচ্ছে। কারণ রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর যে নির্মম নির্যাতন ও বর্বর অত্যাচার চলছে, তা অকল্পনীয়। তাই সবাই আকুতি করছে যাতে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের খানিকটা ‘দয়া’ করে। কিন্তু যারা কোনোরকমে প্রাণটুকু নিয়ে পালিয়ে এসেছে আমাদের বাহাদুর সীমান্তরক্ষীরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের ফেরত পাঠাতে (পুশ ব্যাক) সক্ষম হয়েছে। মিডিয়াও আবার অতি-বাহাদুরিপনা দিয়ে সে সংবাদ প্রচার করছে।

ভিডিও :

 

Posted by Dewan Shofik on Tuesday, 6 December 2016

(এমনি আহাজারি  জানিয়েছেন সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে জার্মান প্রবাসি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক দেওয়ান শফিকুল ইসলাম )

 

কিন্তু এটা মনে রাখা জরুরি যে, মৃত্যুকূপ থেকে কোনোরকমে জান নিয়ে পালিয়ে আসা মানুষকে আবার মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার মধ্যে বাহাদুরি নেই। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার মধ্যে বাংলাদেশের ‘দয়া’ দেখানোরও কিছু নেই; এটা রোহিঙ্গাদের অধিকার। জাতিসংঘ সনদে শরণার্থীদের আশ্রয়প্রাপ্তি অধিকার হিসেবে স্বীকৃত আর জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ।

অনেকে বলে থাকে, বাংলাদেশ ১৯৫১ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি কনভেনশন’এ সই করেনি; তাই শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ আইনগতভাবে বাধ্য নয়। কিন্তু বাংলাদেশ ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ প্রণীত ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ’এ স্বাক্ষরকারী দেশ (স্বাধীনতার পরে অনুসমর্থনকারী দেশ)। ওই সনদের ১৪(১)এ পরিষ্কার লেখা আছে–

“Everyone has the right to seek and to enjoy in other countries asylum from persecution.”

অর্থাৎ অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য প্রত্যেক মানুষের অন্য রাষ্ট্রে আশ্রয় চাওয়া এবং শরণার্থী হওয়ার অধিকার আছে।

সুতরাং রোহিঙ্গারা যে বাংলাদেশে আশ্রয় চাইছে সেটা মোটেও বাংলাদেশের ‘দয়া’ করার বিষয় নয়, এটা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের অধিকার। সংবাদপত্রের ভাষ্য অনুযায়ী কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশও বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ‘কনসার্ন’ জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পার্লামেন্টারি কমিটিও রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সমবেদনা জানিয়েছে। অনেকে মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব/পরামর্শ দিচ্ছে।

আসলে কি সবকিছু সিস্টেমেটিক মেনেজ করা সম্ভব?  সিস্টেম কি মানবতার চেয়ে বড়?