রানা প্লাজা ধসের দুই বছর হয়ে গেলো

0
614

দুই বছর পর এখনো নিখোঁজ ১৫৯ জন পোশাক শ্রমিকের মধ্যে জহিরুল ইসলাম একজন। তিনি কাজ করতের রানা প্লাজার নিউ ওয়েভ গার্মেন্টস-এ। স্ত্রী তানিয়া বেগম আর শিশু কন্যা এলমাকে নিয়ে থাকতেন সাভারেই। কিন্তু ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সব শেষ হয়ে যায়।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নিখোঁজ পোশাক শ্রমিক জহিরুল ইসলামের স্ত্রী তানিয়া বেগম এখনো সময় পেলে যান ধসের জায়গায়। থানায় যান। পারিচিত জনের কাছে খোঁজ নেন। যদি তাঁর স্বামীর কোন ধরণের খবর পান সেই আশায়। কিন্তু এখনো তিনি তার স্বামীর খোঁজ পাননি।

তানিয়া এখনো তাঁর সন্তানকে নিয়ে সাভারেই থাকেন। দূরে ফলবাড়িয়া এলাকায়। এখন নিজেই সেখানে টুকটাক কাজ করেন। কোনভাবে সন্তানকে নিয়ে বেঁচে আছেন। ডাচবাংলা ব্যাংক থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা ছাড়া কিছুই পাননি।

তানিয়া জানান, ‘প্রথম ছয় মাস রানা প্লাজা এলাকায়ই পড়ে থাকতাম নিখোঁজ স্বামীর জন্য। এখন সব আশা শেষ হয়ে গেছে। ডিএনএ টেস্টে মেলেনি। উদ্ধার করা লাশের মধ্যে পাওয়া যায়নি। তারপরও এখনো সময় পেলেই গিয়ে খোঁজ নিই, যদি কোন খবর পাওয়া যায়, সেই আশায়।’

সাভার থানায় নিখোঁজদের পরিবারের পক্ষ থেকে কমপক্ষে ৩০০ সাধারণ ডায়েরি হয়েছিল রানা প্লাজা ধসের পর। সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামারুজ্জামান জানান, ‘এদের মধ্যে অনেকের মরদেহ পরে নানাভাবে সনাক্ত হয়েছে। কিন্তু বড় একটি অংশের লাশ বা কোন সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।’

রানা প্লাজার সব উদ্ধার তৎপরতা শেষ হওয়ার পরও গত দু’বছরে সেখান থেকে অন্তত চারবার নিহতদের কঙ্কাল, মাথার খুলি এবং হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছে। ফ্যান্টম গার্মেন্টস-এর নিখোঁজ আয়েশা বানুর স্বামী সিদ্দিকুর রহমান প্রিয়.কম-এর কাছে অভিযোগ করেন, ‘ঠিকমতো উদ্ধার তৎপরতা চালানো হলে তারপরও বারবার কীভাবে কঙ্কাল পাওয়া যায়। ঠিকমতো উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়নি। ধ্বংসস্তুপের মধ্যে লাশ রেখেই উদ্ধার কাজ শেষ করা হয়।’

এরকম আরো অনেক নিখোঁজ পোশাক শ্রমিকের স্বজনরা এখন আসতে শুরু করেছেন সাভারের ধসে যাওয়া রানা প্লাজার কাছে। ২৪ এপ্রিল ভবন ধসের দুই বছর। এই এলাকাটি দেখে হয়তো বা তারা শান্তনা পেতে চান।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’র (সিপিডি) হিসাব অনুযাী এখনো ১৫৯ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ৩৬৫ নিখোঁজ শ্রমিকের মধ্যে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ২০৬ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। বাকি ১৫৯ শ্রমিকের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।