প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো ঠাঁই নেই। যেখানেই জঙ্গিবাদ, সেখানেই প্রতিহত করবে সরকার। কেউ যেন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তিতে না জড়ায় সেজন্য জনমত সৃষ্টি করতে তিনি সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞানী ও গবেষকদের এবং মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ ও বিশেষ অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আজকে বিশ্বব্যাপী নতুন উপসর্গ শুরু হয়েছে- জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তি। এর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয়ী জাতি, এটা সব সময় আমাদের মনে রাখতে হবে। কাজেই আমরা কোনো সময় পিছিয়ে যেতে পারি না। আমরা কারো অনুগ্রহ, অনুকম্পা নিয়ে নয়, মাথা উঁচু করে বিশ্বসভায় চলবো। তিনি বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী। শুধু দেশে নয়, যারা বিদেশে লেখাপড়া করছে তারাও মেধার দৃষ্টান্ত রাখছে। কাজেই তারা যেন কেউ বিপথে না যায়, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের সঙ্গে যেন না জড়ায় সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেয়ার জন্য আমি শিক্ষক, অভিভাবক থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই সকলে গবেষণার কাজ আরো মনযোগের সাথে করবেন। যারা সত্যিই গবেষণা করে কোনো ফলাফল জাতিকে দিতে পারবেন তাদের জন্য আমাদের চিন্তা-চেতনাতেই আছে আরো বেশি সহযোগিতা করে যাওয়া। আমরা তা করে যাব। তিনি বলেন, আমাদের সীমিত সম্পদ এটা ঠিক; কিন্তু আমি মনে করি, পরিকল্পিতভাবে সীমিত সম্পদ যদি আমরা ব্যবহার করতে পারি এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে এটার ব্যবহার যদি নিশ্চিত করতে পারি তাহলে আমাদের কারো মুখাপেক্ষী হয়ে চলতে হবে না। ২০০১ সালে যখন আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো, ওই সময়ের মধ্যে আমরা দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা ইতিমধ্যে পরমাণু যুগে প্রবেশ করেছি পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্পটি বহুকাল ধরে অবহেলিত ছিল, কিছুতেই কাজে লাগানো যাচ্ছিল না, এখন সেখানে আমরা পা দিচ্ছি। এজন্য আমাদের প্রচুর বিজ্ঞানী দরকার। পরমাণু শক্তি কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য পরমাণু জ্ঞানসম্পন্ন বিজ্ঞানীদের আমাদের দরকার হবে। এজন্য প্রশিক্ষণও দরকার, এই কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দেশকে উন্নতির লক্ষ্যে তার সরকার কাজ করছে। বিজ্ঞানকে নানাভাবে ব্যবহার করা এবং বিজ্ঞানের মধদিয়েই আমরা দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে পারি। সে লক্ষ্য বাস্তবয়নেই আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা খাতসহ সরকারের বৃত্তি, উপ-বৃত্তি প্রদানের বৃত্তান্ত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় নিজ নিজ এলাকার বিত্তবানদের স্কুলগুলোতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরি, সাইন্সল্যাব প্রতিষ্ঠাসহ বিদ্যালয় আধুনিকীকরণে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।
বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠন, বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণা উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ অন সাইন্স অ্যান্ড আইসিটি’ প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাগার ও ইনস্টিটিউটে পরিচালিত গবেষণা ও উচ্চ শিক্ষা, বিশেষ করে এমএস এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে আমাদের জাতীয় পর্যায়ে দক্ষ ও বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও গবেষক তৈরিই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, বিজ্ঞান গবেষণায় সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। ফেলোশিপের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে উত্সাহ ও অনুপ্রেরণা প্রদানের লক্ষ্যে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের গবেষণা অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। জ্ঞানভিত্তিক ও বিজ্ঞাননির্ভর সমাজ গঠনে এ কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাই সর্ব প্রথম ১২ কোটি টাকা অনুদান ধার্য করেছি বিজ্ঞান গবেষণার জন্য। স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী অত্যন্ত কম ছিল। ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার আইন পাস করেছি। একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে দেশ কখনো উন্নত হতে পারে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় ধান ও খাদ্য গবেষণায় গুরুত্ব দিয়েছিলাম বলেই আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আফম রুহুল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সিরাজুল হক খান প্রমুখ। এ বছর ১৭০২ জন শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ এবং গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তাবৃন্দ, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিবর্গ, দেশবরেণ্য গবেষক ও বিজ্ঞানী এবং ফেলোশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।