লম্বা, জটিল ও কঠিন কাজের তালিকা হাতে নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ফ্রান্সের নতুন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। মাত্র ৩৯ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্টের সামনে প্রথম কাজটিই হলো গভীরভাবে বিভক্ত দেশটিকে ঐক্যবদ্ধ করা। দুই অঙ্কের সংখ্যার বেকারত্ব তার কদাকার দাঁত বের করে রেখেছে অনেক দিন থেকেই। সদ্য বিদায় নেওয়া প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের অজনপ্রিয়তার প্রধান কারণই বেকারত্বের উচ্চহার। এর সঙ্গেই রয়েছে জার্মানির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) সংস্কার আনার গুরুদায়িত্ব। ম্যাখোঁর সামনে থাকা প্রধান পাঁচটি চ্যালেঞ্জ নিয়েই তৈরি এ প্রতিবেদন।

১. ঐক্যবদ্ধ ফ্রান্স : ইউরোপপন্থী, উদার ও সাবেক ব্যাংকার ম্যাখোঁ গভীরভাবে বিভক্ত ফ্রান্সের দায়িত্ব নিয়েছেন গতকাল রবিবার। নির্বাচনের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়—ফ্রান্স দুই ভাগে বিভক্ত। এক. শহুরে ফ্রান্স—এরা উদার, সংস্কারে আগ্রহী। আর দুই হলো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। নির্বাচনে ম্যাখোঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মেরিন লো পেনের সমর্থক তারা। অর্থাৎ রক্ষণশীল ও সংস্কারে আগ্রহী নয়। সবচেয়ে বড় কথা ইইউ একেবারেই পছন্দনীয় নয় তাদের। দ্বিতীয় দফায় ম্যাখোঁর ভালো করার কারণটি সম্ভবত তিনি নিজেও বোঝেন, ‘দুই শয়তানের’ মধ্যে তুলনামূলক ভালোজনকে বেছে নিয়েছেন ভোটাররা।    ২. সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন : আগামী ১১-১৮ জুন ফ্রান্সে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ম্যাখোঁর দল রিপাবলিক অঁ মাকেশর (আরইএম) বয়স মাত্র এক বছর। প্রার্থী হিসেবে দলের যাঁদের বেছেছেন ম্যাখোঁ তাঁদের অর্ধেকেরই নির্বাচনের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আর পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে প্রেসিডেন্টের পক্ষে কাজ করা খুব সহজ হবে না। প্রথম দফার নির্বাচনে ফ্রান্সে মূলধারার দল ডানপন্থী রিপাবলিকানদের প্রার্থী ছিলেন ফ্রাঁসোয়া ফিঁয়ো। তিনি এর মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন ম্যাখোঁকে হয়তো জোট সরকার গঠনের পথেই হাঁটতে হবে।

৩. বেকারত্ব : ফ্রান্সে বেকারত্বের হার ১০ শতাংশ। পুরো ইউরোপে এই হার গড়পড়তায় ৮ শতাংশ। আর প্রতিবেশী জার্মানির ক্ষেত্রে ৩.৯ শতাংশ। অর্থনীতির সূচক সচল রাখতে না পারলে ম্যাখোঁর পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে তাঁকেও হয়তো পূর্বসূরি ওলাঁদের পথ ধরতে হবে। ওলাঁদ অজনপ্রিয়তার কারণে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচনে দাঁড়াতেই সাহস করেননি।

৪. সন্ত্রাসী হামলার হুমকি : ফ্রান্সে ২০১৫ সাল থেকে সন্ত্রাসী হামলায় ২৩০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে। প্রথম দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তিন দিন আগেও এ ধরনের হামলায় এক পুলিশ নিহত হয়। ম্যাখোঁর জন্য এটি প্রধান একটি সমস্যা। তাঁর কাছে এ সংকটের কী ধরনের সমাধান আছে বা সন্ত্রাস নিয়ে তিনি কী ভাবছেন তা এখনো স্পষ্ট নয়।

৫. ইইউ সংস্কার : নির্বাচনী প্রচারের সময়ই ম্যাখোঁ বলেছেন, তিনি ইইউয়ে থাকার পক্ষে। তবে সংগঠনটির সংস্কার চান তিনি। অনেকটা এ কারণেই তাঁর প্রথম বিদেশ সফরের লক্ষ্য হচ্ছে বার্লিন। আগামী সোমবার মূলত জার্মান চ্যান্সেলরের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতেই বার্লিনে যাচ্ছেন ম্যাখোঁ। এ ছাড়া অন্য ইউরোপীয় দেশগুলো সফরের লক্ষ্যও রয়েছে তাঁর। উদ্দেশ্য আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন।

সূত্র : এএফপি।