ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমারে তার প্রথম সফর শুরু করেছেন। এই দেশটির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জাতিগত নিধনের অভিযোগ রয়েছে।

গতকাল সোমবার পোপ মিয়ানমার পৌঁছান। পরে তিনি সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের। সফরে মিয়ানমার সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন ওয়াং হ্লেইংয়ের সঙ্গে ১৫ মিনিট বৈঠক করেন পোপ। ভ্যাটিকানের মুখপাত্র গ্রেগ বার্কে জানান, বৈঠকে তারা এই সময়ে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতার ওপর জোর দিয়েছেন। তারা একে অপরকে উপহার প্রদান করেন।

সফরে পোপ রোহিঙ্গা শব্দটি মুখে আনেন কিনা, তা অনেকেই জানতে চাইছেন। মিয়ানমারের সরকারি লোকজন এই শব্দটি প্রত্যাখ্যান করছেন। এখন পোপ যদি তার সফরে এই শব্দটি ব্যবহার করেন, তাহলে বৌদ্ধপ্রধান মিয়ানমারে এ নিয়ে গোলযোগ বেঁধে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সফরের সময় পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমারের কার্যত নেতা অং সান সু চি, রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদল ও বৌদ্ধদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন।

পোপকে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করার পরামর্শটি এসেছে মিয়ানমারের কার্ডিনাল আর্চবিশপ চার্লস মোং বোর কাছ থেকে। সাধারণত এ ধরনের পরামর্শে কখনো পোপের কান দেওয়ার নজির নেই। কিন্তু একসময় বার্মা নামে পরিচিত মিয়ানমারে প্রথমবারের মতো কোনো পোপের সফরে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক এড়াতে চায় ভ্যাটিকান। পোপকে একই পরামর্শ দিয়েছিলেন সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানও।

দেশটিতে ৬ লাখ ৬০ হাজার ক্যাথলিক খ্রিষ্টান বাস করে। কাল বুধবার ইয়াঙ্গুন শহরে এক উন্মুক্ত সমাবেশে পোপ উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া তিনি বৌদ্ধ নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন। ভ্যাটিকানের কর্মকর্তারা বলছেন, পোপ মিয়ানমার সফরের সময় মৈত্রী পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সংকট সমাধানের জন্য সংলাপের ওপর জোর দেবেন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পোপের এ সফর ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। ৮০ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন পোপ ফ্রান্সিস তার উদার দৃষ্টিভঙ্গী ও বৈশ্বিক অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য পরিচিত। শরণার্থীদের পক্ষে তিনি উচ্চকণ্ঠ।

মে মাসে ভ্যাটিকানে সু চির সফরের সময় পোপের এ সফরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা সংকট শুরু হয়। শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের কোনো প্রতিবাদ না করায় বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
মিয়ানমারে কোনো পোপের এটি প্রথম সফর হলেও ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পোপ পল ষোড়শ এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ সফর করেন পোপ ফ্রান্সিস। মিয়ানমারের ৫ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মধ্যে ক্যাথলিকের সংখ্যা ৬ লাখ ৬০ হাজার আর বাংলাদেশের সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে এ ধর্মের অনুসারী ৩ লাখ ৭৫ হাজার। পোপের মিয়ানমার সফরের সময় দেশটির ক্যাথলিকদের একটি বড় অংশ বুধবার ইয়াঙ্গুনে জড়ো হয়ে ধর্মগুরুর সঙ্গে প্রার্থনায় অংশ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিমান, ট্রেন ও গাড়িতে ইয়াঙ্গুনে আসতে শুরু করেছেন ২ লাখ ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান।