ভ্রমন কেন্দ্র ঢাকার হাতির ঝিল

0
4141

ঢাকার বুক নবনিমির্ত হাতির ঝিল ঢাকাবাসীর জন্য সন্ধ্যা নামলেই ভ্রমনকেন্দ্র। প্রচুর পরিমাণে মানুষ এখানে একটু শান্তির খোজে আসেন। বাহারি রংয়ের আলোই অসম্ভব সুন্দর এক পরিবেশে কিছুটা হলেও যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় হাতির ঝিলে।

২০০৭ সালে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ১ হাজার ৯৭১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নিমির্তব্য এই প্রকল্পের কাজ ২০১০ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও শেষ পযর্ন্ত আর্মি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর, রাজউক, ঢাকা ওয়াসা, এলজিইডি যৌথভাবে চেষ্টা-সাধনা-মেধায় প্রকল্পটির প্রথম পর্বের কাজ শেষ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

এর পরপরই সর্বস্তরের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। বর্তমানে হাতিরঝিল এর সাথে গুলশান লেক এবং বনানী লেকের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য দুটি ছোট সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে তেজগাঁও-বেগুনবাড়ী, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মগবাজার, মধুবাগ, উলন, দাসপাড়া, মালিবাগের লোকজনের যাতায়াত সহজ থেকে সহজতর হয়েছে। ভবিষ্যতে এখানে আরও থাকবে পিকনিকের সুযোগ-সুবিধা, বিনোদনের জন্য নৌকা, আড়াই হাজার আসনের উন্মুক্ত মঞ্চ, রামপুরার দিকে দুটি ইউলুপ, নদীতে ভাসমান দর্শনার্থী ডেক, ফুটব্রিজ, ভাসমান টার্মিনাল, সংস্কৃতি ও ব্যবস্থাপনা ভবন এবং পাবলিক টয়লেট। এ প্রকল্পে পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট।

হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে পাবলিক টয়লেট তৈরি না করায় প্রতিদিন আগত বিপুলসংখ্যক দর্শক প্রচন্ড সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, উপায় না দেখে দর্শনার্থী যেখানে-সেখানে প্রস্রাব করে প্রকল্পের পরিবেশ নষ্ট করছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভুগছেন মহিলা দর্শনার্থীরা। কেউ কেউ অতি প্রয়োজনীয় কাজটি সারতে আশপাশের বাসায় গিয়ে বাড়িওয়ালাদের বিরক্তির কারণ হচ্ছেন। দর্শনার্থীদের অনেকেরই আক্ষেপ, ‘কর্তৃপক্ষের চিন্তা করা দরকার ছিল, প্রকল্প উদ্বোধন করার পর হাজার হাজার মানুষ দেখতে আসবে, তখন টয়লেট অতি জরুরি হয়ে পড়বে। হাতির ঝিল কাজে উদ্বোধনের দিন থেকেই পাবলিক টয়লেট প্রস্তুত রাখা উচিত ছিল।’ এছাড়া প্রকল্প এলাকায় বাদাম, ছোলা, মুড়ি, চানাচুরসহ অন্যান্য হালকা খাবারের হকার অবাধে বিচরণ করায় ছেঁড়া কাগজ, বাদামের খোসাসহ অন্যান্য পরিত্যক্ত জিনিসে কয়েকদিনের মধ্যেই হাতিরঝিল প্রকল্পের চেহারা অনেকটাই বিশ্রি হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা নামলেই কেউ মটরসাইকেল নিয়ে কসরত দেখাতে সেখানে যায়। যার ফলে কয়েক দিন পরপরই হাতির ঝিলে দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের দিন হাতিরঝিল প্রকল্পে লাগানো ফুল ও বিভিন্ন জাতের গাছ ছিল সতেজ-সবল। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে গাছগুলো দর্শনার্থীদের পায়ে পদদলিত হয়ে আর হাতের মোচড় খেয়ে খেয়ে মুষড়ে পড়ছে। দর্শনার্থী রায়হান বলেন, “ঢাকা অত্যন্ত ঘনবসতি নগরী। বিনোদনমূলক জায়গাগুলোতে সবসময় বিপুল মানুষের সমাগম হয়ে থাকে, এ চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করলে সবুজ ঘাসগুলোর এ করুন পরিণতি হতো না। হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী প্রকল্পের পুরো সুযোগ-সুবিধা যাতে নগরবাসী উপভোগ করতে পারে সেজন্য প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ অতিদ্রুত শেষ করা উচিত।”

এত কিছুর পর ও হাতির ঝিল স্বগৌরবে তার মাথা উচু করে শহরের বুকে শহরের মানুষের জন্য ছুটির দিনের শ্রেষ্ঠ বিনোদন মুখর স্থান হিসেবে জায়গা করে আছে।
এবং এর অনাবিল সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই পর্যটক যেন এর কাছে ছুটে আসে।

Photo : Sazzad H Shanto