বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বিএনপি সরকার একের পর এক পাটকল বন্ধ করে পাটকে ধ্বংস করে দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সোনালি আঁশ পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে তাঁর সরকার অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে ‘ষড়যন্ত্র করায়’ দেশবাসী নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পাট দিবস ও বহুমুখী পাটপণ্য মেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিএনপি সরকারের আমলে পাট শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯১ সালে বিএনপি যখন সরকারে তখন এই শ্রমিকরা আন্দোলন করেছিল। এই আওয়ামী লীগ তখন পাটের শ্রমিকদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে পাটের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে এবং প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করে। সে সময় বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়ে ১৭ জন শ্রমিককে হত্যা করে। ’

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি পাটশিল্পকে অবহেলা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শে একটা চুক্তি সই করে। এই চুক্তিতে ছিল কী? তারা বাংলাদেশে পাটকলগুলো একে একে বন্ধ করে দেবে। ঠিক একই সময় ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি করে, ভারতকে তারা টাকা দেবে নতুন নতুন পাটকল তৈরি করার জন্য। পার্লামেন্টে আমি এবং আমরা অনেকে এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছিলাম যে আড়াই লাখ বেল পাট রপ্তানির মার্কেট যদি বিদেশে থেকে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের পাটকল কেন বন্ধ হবে? আর ভারত কেন নতুন পাটকল করার সুযোগ পাবে?’ বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমি সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বলেছিলাম, আমাদের তো সব সময় ভারতের দালাল বলেন। কিন্তু এই দালালির যে একটা জ্বলন্ত উদাহরণ সামনে, এটার কী করবেন? তাদের কোনো জবাব ছিল না। কারণ তাদের ওই একটাই, টাকা পাবে আর ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বলেছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যা বলেছে, মনে হয় ফেরেশতা এসে কথা বলেছে। যা বলেছে সেটা করতে হবে। এভাবে তারা আমাদের পাটকলগুলো একে একে ধ্বংস করে দেয়। ’

স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন মা তাঁর রুগ্ণ সন্তানকে কোলে নিয়ে সেবা-শুশ্রূষা করে যেমন সুস্থ করে তোলেন, ঠিক সেভাবেই সব কলকারখানা, পাটকল, বস্ত্রকল প্রভৃতি জাতীয়করণের মাধ্যমে সেগুলো পুনরায় চালু করেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সোনালি আঁশ পাটকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারের উদ্যোগের ফলে আপনারা দেখেন, পাটের সোনালি দিন আবার ফিরে এসেছে। পাট হচ্ছে একটি কৃষিপণ্য, এর সঙ্গে আমার হাজার হাজার কৃষকের জীবন জড়িত এবং জমিতে পাট চাষ হয়, তা প্রাকৃতিকভাবেই শস্যবর্তনের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। কাজেই আমাদের পাটের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা বন্ধ থাকা খুলনার খালিশপুর জুটমিল, সিরাজগঞ্জের কওমী জুটমিলসহ পাঁচটি পাটকল ও দুটি বস্ত্রকল চালু করেছি। এতে প্রায় ২১ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসব পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে। ’ তিনি বলেন, তাঁর সরকার পাটপণ্য গবেষণায় গুরুত্ব দেয় বলেই আজ পাট থেকে প্রায় ৩৫ রকম পণ্য উৎপাদন করা যাচ্ছে। এমনকি প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব পাটের পলিথিন ব্যাগও তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানী মরহুম ড. মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে পাটের জিনরহস্য উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে পাটের উন্নত চাষাবাদের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পাটের মেধাস্বত্ব অধিকার অর্জন করেছি। এখন থেকে পাট আমাদের নিজস্ব পণ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ’

পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে ড. ইউনূসের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা ব্যাংকের এমডি। বয়স হয়ে গেলে এ পদে থাকতে পারবেন না। সেটা নিয়ে কত বড় একটা ষড়যন্ত্র করা হলো। ব্যাংকের সামান্য একটা এমডি পদের লোভে একটা দেশের এত বড় সর্বনাশ যে করতে পারে, তার বিচার দেশবাসী করবে। ’

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজউদ্দিন প্রামাণিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বক্তব্য দেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য স্বাগত বক্তব্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী পাট খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯টি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করেন। পাট বিষয়ে সারা দেশে আয়োজিত রচনা প্রতিযাগিতার বিজয়ীদের মধ্যেও পুরস্কার বিতরণ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তৈরি করা প্রামাণ্যচিত্র ‘বাংলার পাটে বিশ্বমাত’ পরিবেশিত হয়। পরে পাটপণ্যের ফ্যাশন শো ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী এবং পাটপণ্যের মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন।