বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে বিদেশিরা দুবার চিন্তা করেন বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু।
ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না আসার পেছনে দায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্রমবর্ধমান জঙ্গিবাদ, যা বাংলাদেশে বহুমাত্রিক নৃশংস ঘটনা ঘটাচ্ছে।
সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-ইইউ বিজনেস কাউন্সিলের ‘বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ সংলাপ’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইইউর রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাউন্সিল গঠনের পর গতকালই প্রথম সংলাপের আয়োজন করা হয়। সংলাপের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
পিয়েরে মায়াদু বলেন, ‘জঙ্গিবাদের কারণে যেসব নৃশংসতা চলছে, সেগুলোর কোনো ব্যাখ্যা নেই, বিচারও নেই। বিদেশিদেরও হত্যা করা হচ্ছে। আর জ্বালানি ঘাটতি ও অবকাঠামোগত সমস্যা তো আছেই। এসব কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে বিদেশিরা দুবার চিন্তা করেন।’
সংলাপে ৩৬ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া পিয়েরে মায়াদুর সঙ্গে বাংলাদেশে ইইউভুক্ত যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, স্পেন—এই আট দেশের রাষ্ট্রদূতও উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে সংলাপে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন।
ইইউর রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশের অনেক সম্পদ রয়েছে—প্রায়ই এমন প্রচারণা তুলে ধরা হয়। কিন্তু বড় আকারের বিদেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসছে না। যেসব বিদেশি কোম্পানি ইতিমধ্যে বিনিয়োগ করেছে, তারা আবারও বিনিয়োগ করছে। প্রত্যাশামাফিক প্রকৃত নতুন বিদেশি বিনিয়োগ কিন্তু নেই। এই প্যারাডক্স কেন?’
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ তাঁর লিখিত বক্তব্যে ইইউকে দীর্ঘ সময়ের ‘নির্ভরযোগ্য বন্ধু’ বলে অভিহিত করেন এবং দেশের বার্ষিক রপ্তানি আয়ের ৫৫ শতাংশ ইইউভুক্ত ২৮ দেশ থেকে আসে বলে উল্লেখ করেন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ইইউভুক্ত ২৮ দেশে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ২৪৫ কোটি ডলারের পণ্য।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অবকাঠামো খাতের বড় আকারের উন্নয়নে সরকার বিনিয়োগ করছে। দেশব্যাপী গড়ে তোলা হচ্ছে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল। ইইউ বিজনেস কাউন্সিলের সদস্য বন্ধুদের আমি আহ্বান জানাব, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আমরা কী কী সুবিধা দিচ্ছি, আপনারা তা যাচাই করুন।’
তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, বাংলাদেশে আপনার বিনিয়োগকে সুরক্ষা দেওয়া হবে—একই সুরক্ষা পাবেন আপনিও।’
সংলাপ: উদ্বোধনের পর দুই ঘণ্টাব্যাপী সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়, যাতে ওষুধ, বাণিজ্য সহজীকরণ, সেবা খাতে নিবন্ধন ও বিনিয়োগ, বিদেশিদের অর্থ পাঠানোর ওপর কর, কর বিধির জটিলতা ও অস্পষ্টতা—এই পাঁচটি ছিল আলোচ্য বিষয়।
সংলাপ শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যসচিব বলেন, ইইউ বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইইউ যেসব সমস্যায় পড়ে, সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা সেগুলো তুলে ধরেছেন এবং কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। আলোচনা ভালো হয়েছে, সমাধানও হবে।
পিয়েরে মায়াদু বলেন, খুবই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এই সংলাপের ফলে বাংলাদেশে ইইউর বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নতুন মাত্রা পাওয়া যাবে।
বিনিয়োগ বোর্ড আইন এবং শুল্ক আইনের জটিলতাও বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের অন্যতম বাধা বলে উল্লেখ করেন মায়াদু। তিনি বলেন, আইনি বাধার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বাধাও রয়েছে। বিভিন্ন কাজে সরকারি অনুমতি পেতে অনেক সময় লেগে যায়, যার সমাধান হওয়া খুবই দরকার।
‘প্যারাডক্স’ শব্দটি কেন ব্যবহার করেছেন—এমন প্রশ্নের জবাব সরাসরি না দিয়ে পিয়েরে মায়াদু বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ সত্যিই খুব কম।
বিনিয়োগ বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১৬৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৩৪ কোটি ২০ লাখ ডলার।