‘বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখলেই যেন তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। সব কিছু ঠিক থাকার পরও নানাভাবে হয়রানি করা হয়। অথচ তাঁরা অন্য কোনো দেশের নাগরিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন না।’
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হওয়া ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান এভাবেই কালের কণ্ঠ’র কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাভারের আশুলিয়ার গার্মেন্ট এক্সেসরিজের এই ব্যবসায়ী সম্প্রতি ট্যুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের দুর্ব্যবহারের শিকার হন।
মিজানুর রহমানের মতো অনেক বাংলাদেশিই কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে হয়রানি ও অশোভন আচরণের শিকার হয়েছেন এবং হচ্ছেন। বিশেষ করে ট্যুরিস্ট, স্টুডেন্ট, ব্যবসায়িকসহ বিভিন্ন ভিসায় যাঁরা মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন তাঁরাই এই হয়রানিতে পড়ছেন।
তবে সরকারিভাবে কলিং ভিসায় (জিটুজি প্লাস) যেসব শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে তারা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সভাপতি বেনজির আহমেদ। ট্যুরিস্ট, স্টুডেন্টসহ অন্য ভিসায় যারা যাচ্ছে তাদের অনেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে তিনিও স্বীকার করেন।
এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হন সিনিয়র যুগ্ম সচিব মাহবুব কবির মিলনসহ বাংলাদেশের ১২ জন কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অন্য দেশের যাত্রীরা ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে চলে গেলেও বাংলাদেশিদের নিয়ে চলে টানাহেঁচড়া। বিমানবন্দরে যাচাই-বাছাইয়ের নামে চলে হয়রানি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোনো কারণ ছাড়াই কাউন্টারের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আলাদা করে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে চলে মানসিক নির্যাতন। তা ছাড়া কাউকে বিমানবন্দর ডিটেনশন সেলে রাখা হয়, না হয় দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কলিং ভিসায় যারা আসে তারা দুর্ব্যবহারের শিকার হয় না। হয়রানির শিকার হয় শুধু ট্যুরিস্ট ভিসা ও স্টুডেন্ট ভিসায় যারা শ্রমিক হিসেবে এ দেশে আসে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যেন কোনোভাবেই ট্যুরিস্ট কিংবা স্টুডেন্ট ভিসার নামে কোনো শ্রমিক মালয়েশিয়ায় না আসে। এটা বন্ধ করা খুবই দরকার।’ তা না হলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।