Home আজকের গরম খবর ফুটবল পাগলের দেশ জার্মানিতে ‘ক্রিকেট-বিপ্লব’!

ফুটবল পাগলের দেশ জার্মানিতে ‘ক্রিকেট-বিপ্লব’!

‘আমরা খেলতে চাই। কোথায় খেলব?’ জার্মানিতে খেলাপাগল শরণার্থীদের আকুতি এটি। ফুটবলের দেশ জার্মানিতে কর্তৃপক্ষ ফুটবল খেলার মাঠ দেখিয়ে দিতেই তাদের পাল্টা জবাব, ‘ক্রিকেট! আমরা কেবল ক্রিকেটই খেলতে চাই। কোথায় খেলব বল!’

সাম্প্রতিক সময়ে উপমহাদেশের ক্রিকেট-পাগল দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে মোট ৪০ হাজার ৩৭৪ জন শরণার্থী জার্মানিতে পা রেখেছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রত্যাশায়। এর মধ্যে আফগানিস্তান থেকেই যাওয়া শরণার্থীর সংখ্যা ৩১ হাজার ৯০২। অন্যদিকে পাকিস্তান থেকে ৮ হাজার ৪৭২ জন। ক্রিকেট-পাগল এই দুই দেশের অনেকেই জার্মান ক্রিকেট ফেডারেশনের (ডিসিবি) ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারছে প্রিয় খেলাটি খেলার আশায়।
ডিসিবির এই মুহূর্তে পাগল-প্রায় দশা। ফেডারেশনের প্রধান নির্বাহী ব্রায়ান মান্টেল জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে নাকি প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচটি করে আবেদন আসছে নতুন ক্রিকেট ক্লাব স্থাপনের আশায়। শরণার্থীদের মধ্যে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সমাজকর্মীদের মধ্যেও। ক্রিকেট খেলা জীবনেও খেলেননি—এমন অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন খেলাটির প্রতি।
জার্মানিতে ক্রিকেটের অবস্থা এখনো হাঁটি-হাঁটি পা-পা। ফুটবলের দোর্দণ্ড প্রতাপে ক্রিকেট এখনো নবজাতক শিশু। ২০১২ সালে বেশ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই ডিসিবির দায়িত্ব নিয়েছিলে প্রধান নির্বাহী মান্টেল—একজন ইংরেজ। ওই সময়ের তুলনায় ক্রিকেটটা জার্মানিতে ছড়িয়েছে আশানুরূপ গতিতেই। ২০১২ সালে যেখানে জার্মানিতে ১৫০০ নিবন্ধিত ক্রিকেটার ছিল, সেই সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজারে। ক্রিকেট দলের সংখ্যাও ৭০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২০৫।
১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো আইসিসির অনুমোদন পায় জার্মান ক্রিকেট। তার আগে অবশ্য ১৯৮৯ সালেই দেশটি ডেনমার্কের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নামে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ১৯৯৭ সালে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ফ্রান্সের বিপক্ষে জার্মানির ফাইনালটি বিশ শতকে অন্যতম সেরা ক্রিকেট ম্যাচ হিসেবে আইসিসির ‘হল অব ফেমে’ স্থান করে নিয়েছে। জার্মানির ২ রানে হেরে যাওয়া ওই ম্যাচটিতে ফ্রান্সের অধিনায়ক মাথার খুলিতে আঘাত নিয়েও দলকে জিতিয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করে নেয় জার্মানি।
পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মতো দেশ থেকে শরণার্থীদের আগমন জার্মান ক্রিকেটকে নতুন আশার আলোই দেখাচ্ছে। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের ক্রিকেট খেলা, ক্লাব তৈরি করতে চাওয়াকে জার্মান ক্রিকেট ফেডারেশন দেখছে ইতিবাচক বিষয় হিসেবেই। তারাও উৎসাহ নিয়েই এসব ক্লাবের অনুমোদন দিচ্ছেন, ক্লাবগুলোতে ক্রিকেটের সরঞ্জাম পাঠাচ্ছেন। জার্মান ক্রিকেট সংস্থার সামনে এই মুহূর্তে মূল চ্যালেঞ্জ হলে, শরণার্থীদের জন্য একটি সঠিক মাপের ক্রিকেট মাঠ খুঁজে বের করা।
আইসিসিও এগিয়ে এসেছে। এ বছর ১৫ হাজার ইউরো অতিরিক্ত অর্থ সহায়তা করেছে তারা জার্মানিকে। মান্টেলকে সবচেয়ে আনন্দ দিচ্ছে দেশটির অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। জার্মান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ যে উজ্জ্বল, সেটাই যেন জানান দিচ্ছে এই দলটি। এই দলের অর্ধেক ক্রিকেটারই আফগান শরণার্থী। মান্টেল বলেছেন, ‘জার্মান নাগরিকত্বের পরীক্ষা পাস করা এই আফগান বংশোদ্ভূত তরুণেরাই জার্মান ক্রিকেটের মান এগিয়ে নেবে। আমি জার্মান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে দারুণ আশাবাদী।’
জার্মানিকে বলা হয় ফুটবলের দেশ, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, জার্ড মুলার, লোথার ম্যাথাউস; কিংবা হালের ফিলিপ লাম, টমাস মুলার, ম্যানুয়াল নয়্যারদের চারবারের ফুটবল বিশ্বকাপজয়ী এই দেশে কি ভবিষ্যতে একজন শচীন টেন্ডুলকার কিংবা ব্রায়ান লারার জন্ম হবে? সূত্র : এএফপি।