পুরানো প্লাস্টিকের পাইপ, কাটিং প্লাস্টিক পাইপ, ওয়েস্টেজ প্লাস্টিক সামগ্রী এবং খালি প্লাস্টিকের বোতল এখন আর ফেলে দেওয়ার সামগ্রী নয়। এসব সামগ্রীর এখন যথেষ্ট চাহিদা এবং মূল্য রয়েছে। এসব প্লাস্টিক সামগ্রী দিয়ে প্লাস্টিক পাইপ তৈরি হচ্ছে এবং প্লাস্টিকের খালি বোতল গুঁড়ো করে বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের পোর্ট কানেকটিং রোডে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি অলওয়েস্টেজ প্লাস্টিক কাটিং এন্ড ওয়াশিং ফ্যাক্টরি। এই শিল্প মোটামুটি লাভজনক হওয়ায় এখানে ধীরে-ধীরে অসংখ্য কারখানা গড়ে উঠে। বর্তমানে এখানে প্লাস্টিক এবং পাইপ ফ্যাক্টরি মিলিয়ে প্রায় ২০টি কারখানা গড়ে উঠেছে।
এখানে প্রায় এক হাজার শ্রমিক কর্মরত আছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ভাঙ্গারির দোকান থেকে বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী সংগ্রহ করে এখানে কাটিং এন্ড ওয়াশিং এবং গ্রান্ডিং করা হয়। গ্রান্ডিং করা প্লাস্টিকগুলো বিভিন্ন প্লাস্টিক কারখানায় সরবরাহ করা হয়। এসব ওয়েস্টেজ প্লাস্টিক সামগ্রী দিয়ে প্লাস্টিক পাইপ, ঝুড়ি, বদনা, খেলনা, প্লেট, বাসন, তৈরি করা হয়।  গ্র্যান্ডিং করা প্লাস্টিক প্রতি পাউন্ড ১৬ থেকে ৪০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়। এদিকে পেট ফ্ল্যাক্স ফুড গ্রেইন (প্লাস্টিকের বোতল) বিদেশে রফতানি হচ্ছে।
এই শিল্পের একজন সফল উদ্যোক্তা মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীন (বাবুল) এর সাথে আমাদের আলাপ হয়। তিনি বলেন ১৯৯২/৯৩ সালের দিকে চট্টগ্রামের পোর্ট কানেকটিং রোডে অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে শুরু করলেও আজ অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে। অপর এক উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দীন বলেন, এই শিল্পে ব্যাপক লাভ না থাকলেও মোটামুটি লাভ হয়ে থাকে। কিন্তু এই শিল্পে বিরাজ করছে বিভিন্ন সমস্যা। মূলত এই শিল্পের সাথে যারা জড়িত তারা তেমন বিত্তশালী নয়। পুঁজির অভাবে এখানকার ব্যবসায়ীরা ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারছে না। তবে এখানকার কিছু কিছু ব্যবসায়ী প্লাস্টিকের (চিপস) ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছেন। এসব কারখানা ব্যাপকভাবে গড়ে উঠলে বিদেশ থেকে প্লাস্টিকের চিপস আর আমদানি করতে হবে না। আমাদের দেশে প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি গড়ে উঠায় ওয়েস্টেজ প্লাস্টিক সামগ্রী রিসাইক্লিং করায় পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকছে। এখানকার অধিকাংশ ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে থাকে। ব্যাংকের মাত্রারিক্ত সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদেরকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
প্লাস্টিকের বোতলের গুঁড়ো রফতানিকারক কবির আহম্মদ চৌধুরী পান্না জানান ‘‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্লাস্টিকের বোতলের গুঁড়োর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আগে আমাদের দেশে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলে কোনো কাজে ব্যবহূত হতো না। ২০০০ সালের দিকে বেশ কয়েক উত্সাহী উদ্যোক্তা প্লাস্টিকের গুঁড়োর কারখানা গড়ে তোলে। কম পুঁজিতে ভালো লাভ হওয়ায় অনেকেই এ শিল্পে এগিয়ে আসে। বর্তমানে আমাদের দেশে কয়েক হাজার প্লাস্টিকের গুঁড়োর শিল্প গড়ে উঠেছে। এশিল্পের সাথে সম্পৃক্ত আছে প্রায় দুই লক্ষ লোক। আমাদের দেশে সাদা, লাল এবং সবুজ রং-এর প্লাস্টিকের বোতলের রিসাইক্লিং করা হয়।
চীন, কোরিয়া, ভিয়েতনামসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিকের গুঁড়ো রফতানি হচ্ছে। সে সব দেশে এই প্লাস্টিকের গুঁড়ো দিয়ে উন্নতমানের প্লাস্টিকের সুতা তৈরি হয়। এসব প্লাস্টিকের আমাদের দেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানার কাজের জন্য আমদানি করা হচ্ছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর এক থেকে দেড় হাজার টন প্লাস্টিকের গুঁড়ো উত্পন্ন হয় এবং উত্পাদিত প্লাস্টিকের গুঁড়ো বিদেশে রফতানি করে প্রায় একশ’ কোটি টাকার মত বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। একটি প্লাস্টিকের গুঁড়ো কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে ৪/৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। সরকার এই শিল্পকে উত্সাহিত করার লক্ষ্যে ১০ শতাংশ ভতুর্কির ব্যবস্থা করেছে। বিদেশে যে পরিমাণ প্লাস্টিকের গুঁড়োর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে এই শিল্প উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বিশেষ করে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীরা এসব বোতল সরবরাহ করে থাকে। কেজি হিসেবে প্লাস্টিকের বোতল ক্রয় করা হয়।
প্রতি কেজি প্লাস্টিকের বোতলের দাম ৩০-৩৫ টাকা। এ ধরনের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ধরনের প্লাস্টিক শিল্প গড়ে উঠার প্রচুর লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এখানে পুরুষের পাশাপাশি মহিলা শ্রমিকেরা দৈনিক বেতনের ভিত্তিতে কাজ করে থাকে। এসব মাহিলা শ্রমিকেরা দৈনিক ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা মজুরি পেয়ে থাকে।