ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কথা ছিল আবদুল আউয়াল মিন্টুর। ঢাকার মেয়র হওয়ার স্বপ্ন তার দীর্ঘদিনের। এ লক্ষ্যে অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র পূরণে সামান্য ভুলে তার সেই স্বপ্নের সমাধি ঘটে। উচ্চ আদালত পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়েও প্রার্থিতা ফিরে পাননি দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মিন্টু। কিন্তু তার এ সামান্য ভুল যে ছেলের জন্য খুলে দেবে অসামান্য সম্ভাবনার দুয়ার তা সম্ভবত পিতা-পুত্রের কেউই ভাবতে পারেননি।
ভোটার ও নেতাকর্র্মীদের কাছে তেমন পরিচিত নন তাবিথ আউয়াল। কৌশলগত কারণে উত্তরে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তিনি। জানতে পারেননি, ভাগ্যদেবী তখনই হেসেছেন তার দিকে তাকিয়ে। অবশেষে নানা ঘটনার পরিক্রমা শেষে মিন্টুপুত্র তাবিথই হলেন ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে এ কাক্সিক্ষত সমর্থন দিয়েছে বিএনপি।
মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর উত্তরে মাহী বি. চৌধুরী ও তাবিথের মধ্যে কাকে সমর্থন দেয়া হচ্ছে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল। শেষপর্যন্ত তাবিথের ওপরই ভরসা রাখলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। কয়েকদিন আগে তাবিথ ও তার মাকে ডেকে কথা বলেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের আশ্বাস পেয়ে আÍবিশ্বাসী হয়ে উঠেন তাবিথ। বাবার বিকল্প হিসেবে উত্তরে মেয়র পদে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে থাকেন।
নির্বাচিত হলে নগরীর জন্য কী করার পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে তাবিথ জানান, রাজধানীর মেয়র হওয়ার জন্য তার বাবা দীর্ঘদিন স্বপ্ন দেখেছেন। এ নিয়ে তিনি তার পরিকল্পনাও তৈরি করেছেন। সামান্য ভুলে আপাতত তার স্বপ্ন পূরণ হল না। একটি আদর্শ ও বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে দীর্ঘদিন তার বাবা যে স্বপ্ন দেখেছেন তিনি নির্বাচিত হলে সেভাবেই শুরু করতে চান। তবে নতুন প্রজন্ম হিসেবে তিনি নতুন প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাসযোগ্য আধুনিক ঢাকা গড়ার লক্ষ্য অর্জনকে অগ্রাধিকার দেবেন। পাশাপাশি নগরবাসীর প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগোতে চান। এমন ভাবে কাজ করতে চান, যাতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।
রাজনীতিতে নতুন, ব্যবসায়িক অঙ্গনেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেননি, পক্ষান্তরে আপনার প্রধান প্রতিপক্ষ সবার কাছে পরিচিত, তাকে কিভাবে মোকাবেলা করবেন জানতে চাইলে তাবিথ বলেন, রাজনীতি ও ভোটের মাঠে আমি নতুন। এটাই আমার বড় সুবিধা। নগরবাসী আমাকে নতুনভাবে গ্রহণ করবে। তরুণ হওয়ায় নগরবাসীর ভালোবাসা ও স্নেহ আমার সঙ্গে থাকবে। নগরবাসীকে স্বপ্নের নগর গড়ার প্রতিশ্রুতি দেব। নতুন হিসেবে ভোটাররাও আশা করি আমাকে সেই সুযোগ দেবেন।
প্রধান প্রতিপক্ষ প্রার্থীর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আনিসুল হক সাহেব আমার অনেক আগের পরিচিত। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে তিনি আমার প্রতিপক্ষ। আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এমনভাবে কাজ করতে চাই, যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ তৈরি হয় এবং নির্বাচনী মাঠ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।’
আপনার বাবার মনোনয়নপত্রের ভুল নিয়ে বিএনপির ভেতরে-বাইরে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। এটা ভোটে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে তাবিথ বলেন, বাবার ভুল নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। এটা স্রেফ অনিচ্ছাকৃত। যে লোকটি এতদিন ধরে মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন সে ইচ্ছা করে তার স্বপ্ন ভেঙে ফেলবেন তা কি করে সম্ভব!
কার পরামর্শে মনোনয়নপত্র কিনলেন জানতে চাইলে তাবিথ বলেন, মেয়রপদে নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছা না থাকলেও কৌশলগত কারণে তিনি মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন।
মিন্টুপুত্র সবশেষে বলেন, ‘আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। মানুষের সহযোগিতা চাই। আশা করব, নগরবাসী আমাকে ভালোবেসে ভোট দেবে।’